April 12, 2025, 11:56 pm
শিরোনামঃ
নড়াইলে লবণাক্ত পানির প্রভাবে চাষে ব্যাপক ক্ষতি মাগুরা জেনারেল হাসপাতালে জনবল সরবরাহের টেন্ডারে তুঘলকি কান্ড জনগণ বিচার বিভাগের ওপর হারানো আস্থা ফিরে পাবে : প্রধান বিচারপতি বিচারক সংকট ও লজিস্টিক সমস্যার সমাধান করা হবে : আইন উপদেষ্টা তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রীর সাক্ষাৎ তদন্ত কার্যক্রম ও বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চলছে : চিফ প্রসিকিউটর সারাদেশে মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নাটোরে ইসরায়েলবিরোধী মিছিলে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো ২৮ বস্তা টাকা ; গণনায় নিয়োজিত ৪৫০ জন নোয়াখালীতে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
এইমাত্রপাওয়াঃ
আমাদের সাইটে নতুন ভার্ষনের কাজ চলছে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

মাগুরায় সুমি এগ্রো ফার্মে বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনে উদ্যোক্তা সুমির সফলতা 

ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামের মোঃ হারুন মোল্লার কন্যা সুমাইয়া আক্তার সুমি এখন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। সুমি এগ্রো ফার্মে উৎপাদন করা হচ্ছে মাশরুম, জৈব সারের মধ্যে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার, ভার্মি কম্পোস্ট সার (কেঁচো সার) এবং এর পাশাপাশি গরু পালন।
সরেজমিনে শুক্রবার ৮ নভেম্বর সকাল ১০ টার সময় সুমি এগ্রো ফার্মে শ্রমিক জোছনা, তহুরা ও খাতুন ট্রাইকো কম্পোস্ট সার নেটের জালে করে চালার কাজ করে আর্বজনা বিহীন উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার প্রতি বস্তায় ৪০-৫০ কেজি পরিমাণ প্রাকৃতিক সার সংগ্রহ করা হচ্ছে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রয় করার জন্য। এসময় মহিলা শ্রমিকরা জানায় আমরা প্রতি মাসে এখানে শ্রম দিয়ে আয় করে ভালোভাবে সংসার চালাচ্ছি।
সুমি এগ্রো ফার্মের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া আক্তার সুমি জানান, গত ২০২২ সালের শেষ বছর সময় অর্থ্যাৎ প্রায় ২ বছর পূর্বে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুর কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করি। তারপর আমি ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করি ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে বাণিজ্যিকভাবে, প্রতি মাসে এখন ৮- ১০ টন জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষক প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দিয়ে এটা শুরু করে ছিলাম। ভালো মানের উৎকৃষ্ট ট্রাইকো কম্পোস্ট সার তৈরি করতে আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগে।
সার তৈরির উপকরণ হিসেবে কলা গাছ পেসমার্ক, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা লিটার, গোবর এগুলো ডিকম্পোস্ট করে হাউজে দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ট্রাইকো ও ভার্মি কম্পোস্ট সার সাধারণ কৃষকের মাঝে বিক্রি করতেছি ও ফল চাষিদের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর মধুখালী ও শ্রীপুরে বিক্রি হচ্ছে। একটা ৪০-৫০  কেজি বস্তায় কেজি প্রতি ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। মাশরুম চাষ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠায়, আমি একজন গৃহিণী অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনার পর বিয়ে হয়ে যায়। পরে মা মারা যাওয়ার পর মনে হল একটা কিছু করি তখন মাশরুম চাষ শুরু করলাম কিন্তু মাশরুম চাষ গরমের সময় করা যায় না। তাই ভার্মি কম্পোস্ট সার নিয়ে কাজ শুরু করি। সাংসারিক জীবনে ননদ, শাশুড়ি, জা, দেওর, দুইটা সন্তান ও স্বামী আছে। প্রতিমাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে সার এবং খরচ বাদে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। ভবিষ্যতে আমি দুই থেকে এক মাস পরে মাগুরা সদরে বড় পরিসরে ফার্ম করব ইতিমধ্যে কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৬০ হাজার টাকা লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম রিং পদ্ধতিতে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার এবং তার সাথে ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার তৈরি করছি। মাশরুম চাষ দুই বছর ধরে করি এবং ৩০ জন খামারির কাছ থেকে মাশরুম নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ড্রাই মাশরুম ও মাশরুমের গুঁড়া বিক্রি করে থাকি পাশাপাশি আমরা দুই ভাই -বোন মিলে গরু পালন করছি। সুমি এগ্রো ফার্মের নির্বাহী পরিচালক সুমি আরও জানায়, ভার্মি ও ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরির প্রক্রিয়া প্রায় একই। তবে ভার্মি কম্পোস্ট থেকে শুধু জৈব সার পাওয়া যায়, অন্যদিকে ট্রাইকো কম্পোস্ট থেকে সার ও বালাইনাশক দুটোই মিলছে। সার তৈরির জন্য প্রয়োজন তিন ফুট ব্যাসের তিনটি ইট-সিমেন্টের রিং, যেগুলো পলিথিনের ওপর পরপর সাজিয়ে হাউজ তৈরি করতে হয়। এরপর পরিমাণমতো গোবর, কাঠের গুঁড়া, মুরগির বিষ্ঠা, কচুরিপানা, ছাই, নিমপাতা, ট্রাইকোডার্মা পাউডার, চিটাগুড়, ভুট্টা ভাঙা দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হয়। পরে মিশ্রণটি হাউজে দিয়ে পরিমাণমতো পানি দিতে হবে। এরপর হাউজটি একটি টিনের চালা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মিশ্রণটি চার-পাঁচদিন পরপর ভালোভাবে নেড়ে দিতে হবে। তা না হলে গ্যাসের চাপে রিং ফেটে যেতে পারে। ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই সার তৈরি হয়ে ব্যবহারের উপযোগী হয়। এ পদ্ধতিতে রিং দিয়ে তৈরি হাউজের পাশে একটি ছোট গর্ত করে রাখতে হবে, যাতে হাউজ থেকে বের হওয়া লিসেট (তরল পদার্থ) সেখানে জমা হতে পারে। এ তরলই বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ঘরে বসে মাশরুম চাষ করা যায় খুব সহজেই হয়, তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এবং তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিতে ঘরে ফলানোর জন্য উপযুক্ত অয়েস্টার, মিল্কি, প্যাডি স্ট্র জাতীয় মাশরুম। অয়েস্টার মাশরুম ফলানোর পক্ষে আবার শীতকাল উপযুক্ত। বাকি দুটোর উপযুক্ত সময় মার্চের পর থেকে, যখন ঠান্ডা কমে যায়।
অয়েস্টার মাশরুম চাষের জন্য প্রধানত তিনটি উপকরণ দরকার স্পন বা মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায় এমন দোকানে, মাশরুম প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এবং অনলাইন শপিং সাইট থেকে মাশরুমের বীজ কিনতে পাওয়া যাবে। বাকি উপকরণগুলো সহজে জোগাড় করা যায়। চাষের জন্য প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন অথবা ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ফোটানো বা ভেজানোর পরে পানি এমনভাবে ঝরিয়ে নেবেন, যাতে হাত দিয়ে খড় চাপলে পানি না পড়ে অথচ হাতে একটা ভেজা ভাব থাকবে। এরপর একটি পলিব্যাগের মধ্যে দু’ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ, এইভাবে প্রায় সাত-আটটা স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে কষে বন্ধ করে দিন। খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিন, যাতে খড়ের ভিতর হাওয়া জমে না থাকে। এরপরে প্যাকেটে দশ থেকে বারোটা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার তুলা থাকায় ধুলাও ঢুকতে পারবে না। প্যাকেটটি সাত থেকে দশ দিনের জন্য কোনও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিন। খেয়াল রাখবেন, অন্ধকার হলেও জায়গাটিতে যেন হাওয়া চলাচল করে। জায়গাটি যাতে পরিষ্কার ও পোকা-মাকড়মুক্ত থাকে, সে খেয়ালও রাখতে হবে। মাছি কিন্তু মাশরুম চাষে ভয়ানক ক্ষতি করে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্যাকেটে বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা দেবে, যাকে মাইসেলিয়াম বলে। অল্প কয়দিনের মধ্যে পুরো ব্যাগটাই মাইসেলিয়ামে ভরে গেলে তুলো সরিয়ে ফেলে আরও কয়েকটি ছিদ্র করে ব্যাগটিকে কিছুটা আলোর মধ্যে রাখতে হবে। তবে সরাসরি রোদে নয়, ঘরের ভিতর যেটুকু আলোয় বই পড়া যায়, তেমন আলোয়। বাতাসে আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন মাফিক প্যাকেটের উপরে মাঝে মাঝে জল স্প্রে করবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের পিনহেড উঁকি দেবে। সাধারণত পঁচিশ থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা জানান, যশোর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সুমিকে আমরা মাশরুমের এবং ভার্মি কম্পোস্টের প্রদর্শনী দিয়েছিলাম। মাশরুম এবং ভার্মি কম্পোস্ট বিষয়ে তিনদিনের প্রশিক্ষণ এবং তাকে প্রদর্শনীর বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সেগুলো আমরা প্রকল্প থেকে সরবরাহ করেছি। ভার্মি কম্পোস্ট এবং মাশরুম এটি একটি ভালো প্রযুক্তি বিশেষ করে ভার্মি কম্পোস্ট পরিবেশবান্ধব উন্নত মানের জৈব সার। এটি মাটির গঠনগত দিক, মাটির বুনট উন্নত করে, মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মাটির স্বাস্থ্যগত বিষয়ের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট খুবই দরকার। মাশরুম ভালো প্রযুক্তি মাশরুম চাষ করার জন্য জমির প্রয়োজন হয় না ঘরে বসে যেকোনো মানুষ করতে পারে। মাশরুমে আছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রোটিন যে কোন বয়সের মানুষের জন্য ভালো এবং সুপ তৈরি করে খেলে ভালো মানের প্রোটিন সরবরাহ করে। যেহেতু সুমিকে আমরা প্রদর্শনী দিয়েছি এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছি সুমি এখন ভালো ইনকাম করছে মাশরুম ও ভার্মি কম্পোস্ট  সার বিক্রি করে। সুমির দেখাদেখি আশেপাশের কৃষক-কৃষানীরা যোগাযোগ করছে এবং আশেপাশের মানুষ দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আমরা চাই শুধু সুমির মধ্য না এটি শ্রীপুরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে দিতে পারি সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। তিনি আরও জানান, ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের লিসেট (তরল) জৈব বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার এবং পানের বরজের পচনরোধে খুবই উপকারী।
মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইলিয়াছুর রহমান জানান, সুমাইয়া আক্তার শিমু যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ ও লোন নিয়ে এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।

আজকের বাংলা তারিখ

April ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Mar    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  


Our Like Page