অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ‘বিচারের শুদ্ধতার জন্য এবং খুব সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে’ অন্তবর্তীকালীন আপিল এর বিধানটি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
অধ্যাদেশে ‘অন্তবর্তীকালীন আপিল’ এর বিধান রাখায় ট্র্যাইব্যুনালের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা হবে কি না? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল একথা বলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঐতিহাসিক সাদা ভবনের সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের একথা বলেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য নতুন করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের ঐতিহাসিক সাদা ভবনের সংস্কার কাজ। সে কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আপাতত সাদা ভবন সংলগ্ন আদালত কক্ষে (টিন শেড) ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে গঠিত ট্র্যাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন হাইকোর্টের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিকে, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সেই সাথে প্রসিকিউশন টিমে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান অ্যাডভোকেট গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ, এস এম মঈনুল করিম, মো. নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, শাইখ মাহদী, তারেক আবদুল্লাহ, তানভীর হাসান জোহা (ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ)।
অন্যদিকে, ১০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। যেখানে তদন্ত সংস্থার কোঅর্ডিনেটর পদে মো. মাজহারুল হককে (অ্যাডিশনাল ডিআইজি, অবসরপ্রাপ্ত) এবং কো–কোঅর্ডিনেটর পদে মুহাম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরীকে (পুলিশ সুপার, অবসরপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থার অপর কর্মকর্তারা হলেন: মো. আলমগীর (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ঢাকা), মোহা. মনিরুল ইসলাম (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স), মো. জানে আলম (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা), সৈয়দ আবদুর রউফ (সহকারী পুলিশ সুপার, ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুল, ঢাকা), মো. ইউনুছ (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, সিআইডি), মো. মাসুদ পারভেজ (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, চারঘাট মডেল থানা, রাজশাহী), মুহাম্মদ আলমগীর সরকার (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, আরআরএফ–ঢাকা) ও মো. মশিউর রহমান (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, সিআইডি, ঢাকা মেট্রো–উত্তর)।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে একে একে জমা পড়ে গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কয়েকশো অভিযোগ। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
এরপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ৯ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিবকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুলিশের সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ২০ অক্টোবর সাবেক পুলিশ প্রধান সহ ৮ কর্মকর্তাকে হাজির করলে ট্র্যাইব্যুনাল তাদের গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাগারে রাখার আদেশ দেন।
Leave a Reply