অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দুই ফুসফুসে নিউমোনিয়া নিয়ে গুরুতর অসুস্থ পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থার ‘কিছুটা উন্নতি’ হয়েছে।
হাঁপানি, নিউমোনিয়া, রক্তের জটিলতাসহ আরো বেশকিছু শারীরিক জাটিলতা নিয়ে তিনি ১১ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ভ্যাটিকান সোমবার জানিয়েছে, ৮৮ বছর বয়সী পোপের স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে, ভ্যাটিকান তার সন্ধ্যার বুলেটিনে বলেছে, ‘পবিত্র পিতার গুরুতর অবস্থার সামান্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে।’
ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
এতে বলা হয়, আজ হাঁপানির কারণে শ্বাসযন্ত্রের কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি, কিছু পরীক্ষায় উন্নতি দেখা গেছে।’
ফ্রান্সিস সকালে ইউক্যারিস্ট (খ্রিস্টান ধর্মীয় পবিত্র ভোজনোৎসব যার মাধ্যমে যিশুর অন্তিম সায়মাশ বা লাস্ট সাপারকে স্মরণ করা হয়) গ্রহণের পর বিকেলে কাজ করেছেন।
ফ্রান্সিসের মেডিকেল টিম জানিয়েছে, তিনি যে ওষুধে চিকিৎসা নিচ্ছেন তা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তা দেখা যেতে সময় লাগবে। শুক্রবার তারা জানান, তিনি অন্তত পুরো সপ্তাহ হাসপাতালে থাকবেন।
শনিবার সকালে দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাসকষ্টের পর ফ্রান্সিসের আর কোনো শ্বাসকষ্ট হয়নি। তবে ভ্যাটিকান সিটির কেন্দ্রীয় গভর্নিং বডি হলি সি এক আপডেটে জানিয়েছে, তিনি নাকের ক্যানুলার মাধ্যমে ‘উচ্চ-প্রবাহ’ অক্সিজেন গ্রহণ করছেন।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, পোপের রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা অস্বাভাবিক নেমে যাওয়ায় ‘থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া’ দেখা দেওয়ায় তাঁর শরীরে দুই ইউনিট ‘লোহিত রক্তকণিকা’ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তবে, কিছু রক্ত পরীক্ষায় প্রাথমিক, হালকা, কিডনি ব্যর্থতা দেখা গেছে, যা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের নেতা পোপ ফ্রান্সিসকে ১৪ ফেব্রুয়ারি শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোমের জেমেলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রথমে তার ব্রঙ্কাইটিস ধরা পড়ে। পরে উভয় ফুসফুসে নিউমোনিয়া ধরা পড়লে শনিবার রাতে, ভ্যাটিকান প্রথমবারের মতো তার অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ বলে সতর্ক করে।
পরবর্তীতে রোববার ভ্যাটিকান বলেছে, ‘পবিত্র পিতার অবস্থা এখনও সংকটজনক, তবে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে তাঁর আর কোনো শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়নি।’
গত কয়েকদিন আগে তাঁর লিখিত ও রোববার প্রকাশিত একটি বার্তায়, ফ্রান্সিস হাসপাতাল কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তাঁর চিকিৎসার প্রতি তিনি আস্থাশীল।
তিনি বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে জেমেলি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্রামও থেরাপির অংশ!’
প্রকাশিত একটি বার্তায় ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘আমি আপনাদের কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করছি।’
জেমেলির ধর্মগুরু নুনজিও কোরাও সোমবার হাসপাতালে একটি বিশেষ প্রার্থনায় নেতৃত্ব দেন।
শুভাকাঙ্ক্ষীরা জেমেলির বাইরে মোমবাতি রেখে আসছেন। ফ্রান্সিস সেখানকার দশম তলায় একটি বিশেষ পোপ স্যুটে থাকেন। ভ্যাটিকান বলেছে, তিনি রোববার সকালে একটি প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন।
ইতালীর শিক্ষক ইলদে জিটো হাসপাতালে এএফপিকে বলেন, ‘আমি তার জন্য, তার স্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করছি, কারণ, তিনি আমাদের সকলের জন্য একজন বিশেষ ব্যক্তি।’
অন্যান্য খ্রিস্টান ও বিশ্ব নেতাদের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিকের পক্ষ থেকেও প্রার্থনা ও সংহতির বার্তা আসে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠককালে বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতি কিন্তু আমরা চাই তিনি যদি সম্ভব হয় সুস্থ হয়ে উঠুন।’
বুয়েনস আয়ার্সের ক্যাথেড্রালে ফ্রান্সিস একসময় আর্চবিশপ ছিলেন, সেখানকার পুরোহিত রোববার একটি বিশেষ প্রার্থনা করেন।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপের প্রাক্তন ঘাঁটি ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মসুল। ২০২১ সালে ফ্রান্সিস শহরটি পরিদর্শন করেন। শহরটিতে কমপক্ষে এক ডজন ক্যাথলিক তাঁর জন্য প্রার্থনা করেছেন।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম সোশ্যাল মিডিয়ায় আমেরিকা মহাদেশের প্রথম পোপ ‘মহান মানবতাবাদী’ ফ্রান্সিসের দ্রুত আরোগ্যের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
ইতালির ‘করিয়ের ডেলা সেরা’ সংবাদপত্র শিরোনামে লেখা হয়, ‘রোববার পোপের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।’
ইতালির অন্য একটি দৈনিক লা রিপাবলিকা দিনটিকে ভ্যাটিকানের ‘সবচেয়ে কালো দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ফ্রান্সিসের অব্যাহত হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তিনি পদত্যাগ করতে পারেন কিনা তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
তিনি সর্বদা তার পূর্বসূরী ২০১৩ সালে পদত্যাগকারী প্রথম পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টকে অনুসরণ করতে পারেন। তবে তিনি বারবার বলেছেন, এটি সময় নয়।
ধর্মতত্ত্ববিদ স্পাদারো একমত হয়েছেন যে পদত্যাগের বিষয়ে এখন আলোচনা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘পোপ সতর্ক আছেন, তিনি এমনকি তার হাসপাতালের বিছানা থেকেও ভিন্নভাবে তার যাজকীয় দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কম দৃশ্যমানভাবে তার উপস্থিতি প্রকাশ করছেন।’
পোপ কঠোর পরিশ্রমী এবং কাজের সময়সূচি বজায় রাখেন। সেপ্টেম্বরে তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১২ দিনের সফর করেন। কিন্তু তিনি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন।
যৌবনে পোপের ফুসফুসের একটি অংশ অপসারণ করা হয়েছিল।
২০২১ সালে তার কোলন সার্জারি এবং দুই বছর পর হার্নিয়ার জন্য একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার ওজন বেশি এবং ক্রমাগত নিতম্ব এবং হাঁটুতে ব্যথা থাকে, যা তাকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য করে।
Leave a Reply