অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দুই যুগ আগের ক্লিনটন-মনিকা কেলেঙ্কারির ঘটনা আবারও আলোচনায় ফিরে এসেছে। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে মনিকা লিউনস্কি ২৫ বছর আগের সেই কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করে বলেন, তখন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পদত্যাগ করাই উচিত ছিল।
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, বুধবার অ্যালেক্স কুপারের সঞ্চালনায় ‘কল হার ড্যাডি’ নামক একটি পডকাস্টে হোয়াইট হাউসের সাবেক ইন্টার্ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কথিত প্রেমিকা মনিকা লিউনস্কি একথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ১৯৯৮ সালে তাদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর কংগ্রেস যখন ৪২তম মার্কিন রাষ্ট্রপতির বিল ক্লিনটনের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়ে মিথ্যা বলার জন্য তাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয় তখন তার ওভাল অফিস থেকে পদত্যাগ করা উচিত ছিল।
পডকাস্টে মনিকা বলেন, আমি মনে করি, সঠিক কাজটি হতে পারত পদত্যাগ করা। অথবা দায়িত্বে থেকে যেতে চাইলে ঘটনাটি স্বীকার করে নেওয়াই উচিত ছিল। অল্পবয়সী এক নারীকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নয়, যে মাত্রই চাকরি শুরু করেছে এবং সব কিছু বুঝে ওঠার সময়টুকুও পায়নি।
তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আমার প্রজন্মের নারীদের প্রকাশ্যে হয়রানির অনেক ঘটনা দেখতে হয়েছে, যেখানে একজন অল্পবয়সী নারীকে তার ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে শুধু নারী হওয়ার কারণে।
১৯৯০এর দশকের শেষের দিকে, বিল ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ৪৯ বছর। স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও মেয়ে চেলসি ক্লিনটনকে নিয়ে তিনি হোয়াইট হাউজে থাকতেন। অন্যদিকে, মাত্র ২২ বছর বয়সী মনিকা লিউনস্কি হোয়াইট হাউজে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখনই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ক্ষমতার ভারসাম্যের দিক থেকে দেখলে, মনিকা তখন ক্লিনটনের তুলনায় একেবারেই অসহায় ছিলেন। ২০২১ সালে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তখনকার সময়ের সঙ্গে এখনকার সময়ের অনেক তফাৎ। সম্মতির যে একটি ব্যাপার থাকে, এখনকার মতো তা ভাবার সুযোগও আমার ছিল না। তিনি ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, বয়স তার ৪৯ বছর। আমার বয়স মাত্র ২২, সবে কলেজ শেষ করেছি। আমি মনে করি, ক্ষমতার যে ভারসাম্যহীনতা, তাতে গাড্ডায় পড়া আমি এড়াতে পারতাম না। তবে এখন ৪৮ বছর বয়সে এসে আমি ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে বোঝার সুযোগ পাচ্ছি।
এই সম্পর্ক গোপন করতে গিয়ে ক্লিনটন মিথ্যা বলায় কংগ্রেসে তার বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে সক্ষম হন, তবুও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইম্পিচমেন্টের মুখোমুখি হওয়ার তালিকায় নাম ওঠান। এ ঘটনায় ক্লিনটনকে ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়।
হিলারি ক্লিনটন প্রকাশ্যে স্বামীর পাশে দাঁড়ালেও তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে তখন তীব্র উত্তাপ তৈরি হয়েছিল বলে সংবাদমাধ্যমে জানা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই উত্তাপ কমলেও হিলারি নিজেকে রাজনীতিতে নিয়োজিত করেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন এবং পরে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থীও হন।
২০২১ সালে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনিকা বলেছিলেন, তিনি এখনকার ‘মি টু’ আন্দোলনের অংশ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এখনকার সাংবাদিকরা নারীদের প্রতি আরও সংবেদনশীল আচরণ করবেন, যা তিনি তখন পাননি।
Leave a Reply