মোঃ ফাহিমুল ইসলাম : মহেশপুর-কোটচাঁদপুর উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের প্রত্যাশা নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। ব্যারিষ্টার কাজল পেশায় একজন আইনজীবী। দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র এডভোকেট। এছাড়া ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লিংকনস ইন থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার।
২ অক্টোবর মহেশপুর ডাক বাংলোয় অনুষ্ঠিত মতবিনিময়কালে ব্যারিষ্টার কাজল বলেন, আমি ১৯৮৬ সালে মহেশপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৮৮ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি, পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি। আমি একজন সাবেক কুটনীতিক। ২০০৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে দ্বিতীয় সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আছি ছাত্র জীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলাম।
এর মাঝে আমি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় আইন শাস্ত্রে সম্মান ও দি সিটি ইউনিভার্সিটি, লন্ডন থেকে বার ভোকেশনাল কোর্স সম্পন্ন করে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করি। ২০২০ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পরপর নির্বাচিত সম্পাদক নির্বাচিত হই। আমি সারাদেশের আইনজীবীদের ভোটে দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হই। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইনের শীর্ষ অঙ্গনে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও সক্রিয় ভুমিকা রেখে চলেছি। একারনে, বিগত ফ্যাসীবাদ আমলে ডিবি অফিসে ৪ দিনের রিমান্ড ভোগ করতে হয়েছে, কারাবরণ করতে হয়েছে। আমি একজন সম্মুখসারির জুলাই যোদ্ধা।
নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের প্রতি আমার অনুরক্ততা তৈরি হয়। যেটি আর কখনো ভিন্ন খাতে যায়নি। আমি এই দল ছাড়া অন্য কোন দল করিনি, এমনকি অভিমান বা অনুযোগ করেও এক দিনের জন্য দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে থাকিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি মহেশপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, কেন্দ্রীয় ছাএদলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করছি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, উন্নয়ন শুধুমাত্র রাস্তা-ঘাট বা ভবন নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি মানুষের নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত, তাদের মৌলিক অধিকার ও উন্নয়নের দাবিগুলো জাতীয় পর্যায়ে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। তবে একথা সত্য যে, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, জনাব শহীদুল ইসলাম ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরে এ এলাকায় ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল। ২০০৮ সালের পরে জনগণের ম্যান্ডেটহীন প্রতিনিধিরা এই ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, আমি সচেতন যে, একজন সংসদ সদস্যের মূল দায়িত্ব হলো আইন প্রণয়ন করা। আইন পেশায় আমার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সেক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারবো বলে আশা রাখি।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া অন্চলভিত্তিক আমার রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা। আমি দল কর্তৃক মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মহেশপুর সীমান্ত এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার ঘটানো হবে। কৃষকদের জন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।কোটচাঁদপুরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তুলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হবে। সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হবে। মহেশপুরে অবস্থিত দত্তনগর কৃষি ফার্ম ও কোটচাঁদপুরে অবস্থিত বলুহর মৎস্য প্রজেক্টকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে।
গ্রামীণ সড়ক ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে গঠনমূলক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে একটি আধুনিক ও উন্নত ঝিনাইদহ-৩ আসন গড়ে তোলা হবে।
আমাদের প্রধান উন্নয়ন ভাবনা হলো—
* অবকাঠামো উন্নয়ন: গ্রামীণ সড়ক, সেতু, কালভার্ট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন।
* শিক্ষা খাতে অগ্রাধিকার: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান।
* কৃষি উন্নয়ন: কৃষকদের জন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, সেচ সুবিধা ও ন্যায্যমূল্যে উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ।
* স্বাস্থ্যসেবা: ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আধুনিকীকরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা।
* যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান: বেকার যুবকদের জন্য প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ঋণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি।
* নারীর ক্ষমতায়ন: নারী শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্যোগে সহায়তা।
* সামাজিক নিরাপত্তা: বৃদ্ধ, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা ও সহায়তা নিশ্চিত করা।
* আমরা আশা করি, এই উন্নয়ন ভাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহেশপুর-কোটচাঁদপুর একটি স্বনির্ভর, শিক্ষিত, স্বাস্থ্যবান ও সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হবে।
আমরা সকল সাংবাদিক ভাই-বোন ও জনগণের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি—এই উন্নয়ন ভাবনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। একসাথে কাজ করলে মহেশপুর-কোটচাঁদপুর আগামী প্রজন্মের জন্য একটি মডেল অঞ্চল হয়ে উঠবে।