অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের চলমান শাটডাউন পরিস্থিতিতে আগামী শনিবার থেকে সরকারি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি ‘ফুড স্ট্যাম্প’ (এসএনএপি) বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে দেশটির প্রতি আট জনের মধ্যে একজন এই সহায়তা কর্মসূচির ওপর নির্ভরশীল।
এই সহায়তা পাওয়া ব্যক্তিদের একজন এরিক ডানহ্যাম (৩৬)।
এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তিনি উপার্জন করতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন এবং এখন বেঁচে থাকার জন্য এই সরকারি খাদ্য কর্মসূচির ওপরই তিনি নির্ভরশীল।
ডানহ্যাম বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, ‘যদি আমি ফুড স্ট্যাম্প না পাই, তাহলে আমি খেতে পারব না।’
নিজের মাসিক খরচের পর, তার হাতে থাকে মাত্র ২৪ ডলার।
তিনি বলেন, ‘এটাই সব। সন্তানের খরচ জোগাতে বাকি অর্থ ব্যয় হয়ে যায়।’
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের বাজেট বিতর্কের জেরে ১ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছিল, শনিবার থেকে এসএনএপি প্রোগ্রামে আর অর্থায়ন করা সম্ভব হবে না।
এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ৬০ বছরের ইতিহাসে এইপ্রথমবারের মতো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
তবে শুক্রবার এক ফেডারেল বিচারক জরুরি তহবিল থেকে এসএনএপি চালু রাখার নির্দেশ দেন।
ট্রাম্পও জানিয়েছেন, তিনি রায় মেনে চলবেন।
তবুও প্রশাসনিক জটিলতায় অনেক উপকারভোগী ইতোমধ্যেই এই সহায়তা হারিয়েছেন।
হিউস্টনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি রেস্তোরাঁয় শনিবার কিছু স্যান্ডউইচ ও পানীয় বিতরণ করে। ডানহ্যামও সেখানে খাবার পান।
রেস্তোরাঁর মালিক নান নো (৩৭) বলেন, ‘এলাকায় চাকরি হারানোর ঘটনাও বাড়ছে। প্রচুর কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে এবং তার ওপর সরকারি শাটডাউন রয়েছে। কেউ জানত না কী ঘটতে চলেছে। আমি এমন একজনের জন্য স্যান্ডউইচ তৈরি করেছি, যিনি আসেন ও এসএনএপি’র এই সহায়তা পান এবং অন্তত একবারের জন্য খাবার খেতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবু অন্তত এক বেলার খাবার দিতে পেরে ভালো লাগছে।’
খাবারের মূল্য এসএনএপি কার্ডে পরিশোধ করতে না পারলেও, ডানহ্যাম কৃতজ্ঞতায় তাকে আলিঙ্গন করেন।
তিনি বলেন, ‘এটা বিলাসিতা নয়, মৌলিক প্রয়োজন।’
হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়াম এলাকায় হাজারো মানুষ গাড়ি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন-কিন্তু কেউ খাদ্য সহায়তা পাননি।
কেউ এই সহায়তা আর পাবেন কি-না, তা ভেবে তারা উদ্বিগ্ন।
সেখানে হিউস্টন ফুড ব্যাংক ফলমূল ও শুকনো খাবার বিতরণ করছে।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ব্রায়ান গ্রিন বলেন, ‘শুধু হিউস্টন এলাকাতেই প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার পরিবার এসএনএপি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।’
তিনি আরো বলেন, আদালতের নির্দেশে সহায়তা পুনরায় চালু হলেও, রাজ্যগুলোর তহবিল শেষ হয়ে যাওয়ায়— প্রোগ্রাম পুনরায় চালু করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
সহায়তা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন সান্দ্রা গুজম্যান (৩৬)। তিনি দুই সন্তানের মা।
তিনি বলেন, ‘এটা কোনো বিলাসিতা নয়, এটা আমার সন্তানদের খাবারের প্রশ্ন।’
তার হিসাব অনুযায়ী, ফুড স্ট্যাম্প তার পরিবারের মোট খরচের প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ‘খাদ্য না পেলে, বিশৃঙ্খলা শুরু হবে।’
৭২ বছর বয়সী মেরি উইলোবি তার নাতনিকে নিয়ে এনআরজি স্টেডিয়ামের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
এই বৃদ্ধ বলেন, ‘আমাদের ফুড স্ট্যাম্প দরকার, সামাজিক নিরাপত্তা দরকার ও মেডিকেয়ার দরকার।
তিনি আরো বলেন, ‘এই সহায়তা বন্ধ করে দিলে, দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এবং মানুষ বাঁচার জন্য লুটপাট শুরু করবে।’
এই খাদ্য কর্মসূচির আরেক উপকারভোগী ক্যারলিন গাই (৫১) প্রশাসনের অগ্রাধিকার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘আপনি আমাদের ফুড স্ট্যাম্প বন্ধ করে দিচ্ছেন, অথচ হোয়াইট হাউসে নতুন বলরুম নির্মাণে কেন কোটি ডলার খরচ করছেন?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পরিশ্রম করি, তবু আমাদের মৌলিক চাহিদা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে— এটা ন্যায়সঙ্গত নয়।’