অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়াররা নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনাসহ প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা মানবসেবায় নিয়োজিত। গতি, সেবা ও ত্যাগের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত এ বাহিনীর সদস্যরা সেবামূলক কর্মতৎপরতার জন্য সাধারণ মানুষের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
আজ (শুক্রবার) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর পূর্বাচল ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ’আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্প ও অগ্নিদুর্ঘটনাসহ দেশের বড় বড় দুর্ঘটনায় ফায়ারফাইটারদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছে। কোনো রকম সুবিধা ছাড়াই নিজের ইচ্ছায় এ ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন তিনি।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের স্বেচ্ছাসেবকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং তাদের জন্য আয়োজিত প্রশিক্ষণের মান ও সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
সমবেত স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস’ বা ‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ পালন করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য স্বেচ্ছাসেবক তথা ভলান্টিয়ারদের সুসংগঠিত করা, তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া ও কাজকে প্রচার করা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন ও উৎসাহিত করা।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সারা দেশে ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৫৫ হাজারেরও বেশি ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এজন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালকসহ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও দেশি-বিদেশি সংস্থাকে ধন্যবাদ দেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে এককভাবে ভূমিকম্প, বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ও বন্যার মত দুর্যোগ মোকাবিলা করা কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে ভলান্টিয়াররা পেশাদার বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এজন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে ভূমিকম্পের মত দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ জরুরি।
উপদেষ্টা বলেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পরিবারের গর্বিত স্বেচ্ছাসেবী সদস্য হিসেবে আর্তমানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জনবল সংকট দূর হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়বে।
পাশাপাশি নিয়মিত এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন, বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন, মহড়া ও গণসংযোগ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশে থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান উপদেষ্টা।
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ রাজনীতিমুক্ত হবে কিনা-সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন করা হয় জনগণকে সেবা দেয়ার জন্য। পুলিশ কমিশন জনগণ ও পুলিশের প্রকৃত কল্যাণে কিছু সুপারিশ করবে। আর সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।
এর আগে স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের বাস্তব মহড়া দেখেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী।
সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত ২২ জন ভলান্টিয়ারকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন সংস্থার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।
তিনি তার বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিরলস ও সাহসী অবদানের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার।
সকাল ৮টা থেকে দেশের ৮টি বিভাগ হতে আগত স্বেচ্ছাসেবকদের নিবন্ধনের মাধ্যমে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ৯টায় স্বেচ্ছাসেবক ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়।
অনুষ্ঠানে দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক, উপ-পরিচালক, ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।