রসূলে মাকবুল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁকে ‘খাতামুন নবিয়্যীন বলা হয়। হযরত ইব্রাহীম, হযরত মূসা ও হযরত ঈসা (আ) প্রমুখ নবী তাঁর আগমনের পুর্বাভাস প্রদান করেছিলেন। হযরত আদম (আঃ)Ñএর প্রাপ্ত ইসলাম ধর্ম হযরত ইব্রাহীম (আঃ)Ñএর হাতে উৎকর্ষ লাভ করে রসূল (সঃ) এর হাতে পূর্ণতা লাভ করে। সেজন্য তার উপর উপাধি ‘সাইদুল মুরসালীন’, রসূলগণের নেতা। পরকালেও তিনি আলাহর দরবারে অপরাপর নবী ও রসূলগণের অগ্রনী নেতা হিসাবে উচ্চ মর্যাদাার আসন লাভ করবেন। যাবতীয় গুনের আধার ও গুনের প্রতীক রসূল (সঃ) তাই ইহকাল ও পরকালের শ্রেষ্ঠ নেতা ।
রসূল (সঃ) এর পরিবারবর্গও আলাহ তা‘আলার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় ও আদৃত। তাঁর পরিবারবর্গ অর্থাৎ তাঁর পবিত্রাত্মা স্ত্রীগণ, তাঁর কন্যাগণ ও তাঁর গর্ভজাত সন্তানÑসন্ততির শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তিবর্গ। তার কারণ এই যে,তাঁরা দৈহিক সম্পর্ক ও রসূল (সঃ) এর সহচর্যের গুণে অন্যদের চেয়ে দৈহিক ও আধ্যাতিক উভয় দিক থেকেই উচ্চতর মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন।
রসূল (সঃ) এর সাহাবীগণও তাঁর পবিত্র সাহচর্য লাভ করে এক অতুলনীয় দৃষ্টান্তমূলক মানবগোষ্টিতে পরিণত হয়েছিলেন। এমনকি তাঁর দশজন সাথী প্রসঙ্গে তাঁদের জীবদ্দশায়ই জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। তাঁদেরকে ‘আশারাÑইÑমুবাশ্শারা’ (শুভ সংবাদপ্রাপ্ত দশজন) আখ্যা দেওয়াা হয়েছে। তাছাড়া তাঁর পরে অন্য কোন নবী হওয়ার সুযোগ থাকলে হযরত উমর (রা) নবী হতেন বলে তিনি নিজেই উক্তি করে গিয়েছেন। তা দ্বারাই রসূল সলালাহু আলাইহি ওয়াসালামÑ এর সাহাবীগণের মর্যাদা কত উচ্চে তা প্রমাণিত হয়। রসূল (সঃ) উম্মতের উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান অন্য নবীহণও কামনা করতেন। পূর্ণতাপ্রাপ্ত ইসলামী জীবন বিধানের অনুযায়ী হয়ে এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে তাাঁর উম্মতগণ মহান ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ।
১. মহান আলাহ ইবরাহীম (আঃ)Ñকে বন্ধু রূপে, মূসা (আঃ)Ñকে গোপনীয় সম্বোধনের পাত্র রূপে এবং আমাকে হাবীব (বিশেষ বন্ধু) রূপে গ্রহণ করেছেন। অতঃপর আলাহ তা‘আলা বলেছেন, “আমার সম্মান ও মর্যাদার কসম! আমি নিশ্চয়ই আমার হাবীবকে আমার খলীল (ইবরাহী) ও আমার নাজীর (মূসা)Ñএর ওপর প্রাধান্য দেব।’ হাকিম, তিরমিযী, তিবরাণী, দায়লমী ও ইবনে আসাকির আলোচ্য হাদীসখানা আবূ হুরায়রা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিবরাণী তাকে দূর্বল হাদূীস বলে মন্তব্য করেছেন।
২. হে উমর ! তুমি কি জান না যে, নিশ্চয়ই আলাহ্ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করে বলেছিলেন,“তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” আহমদ ও শায়খাইন এবং আবূ দাউদ ও তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা) Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩. রাতের বেলা যখন আমাকে ভ্রমন (মি‘রাজ) করানো হল, তখন আমি আমার মহান ও মর্যাদাশীল প্রভুর নিকট হাজির হলাম। তিনি আমার মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনটি বিষয়ে আমার প্রতি ওহী পাঠালেন, তাতে বলা হল, ‘তিনি (আমি) প্রেরিত রাসূলদের নেতা, পরহেজগার ব্যক্তির অভিভাবক ও বন্ধু এবং কপালে ও হাতে পায়ে সাদা চিহ্ন ধারণকারীদের নেতা। [হাশরের মাঠে উম্মতে মুহম্মদীকে বিশেষ চিহ্নসমূহের মাধ্যমে সহজই চেনা যাবে। তা হল, কপালে ও হাতে পায়ে ওযূর কারণে উজ্জ্বল শ্বেত বর্ণ।] ইবনু নাজ্জার আলোচ্য হাদয়সখানাা হযরত আবদুলাহ ইবনে আসাদ ইবনে যুরারা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৪. আমি আমার প্রভু আলাহকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার মনে হয, তাঁকে এটা জিজ্ঞাসা না করলেই ভাল হত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,“হে আমার প্রভু! পূর্বেকার নবীদের মধ্যে কেউ মৃতকে জীবিত করতেন, তাঁদের মধ্যে কেউ এমনও ছিলেন যে, তাঁর জন্য বায়ুকে তাঁর অধীন করে দিয়েছিলেন।” তখন আলাহ্ বললেন, “আমি কি তোমাকে ইয়াতীম অবস্থায় পেয়ে আশ্রয় দান করেনি?” আমি বললাম, “হে আমার রব!” অতঃপর আলাহ্ বললেন, “আমি তোমাকে পথান্বেষী অবস্থায় পাইনি, তারপর তোমাকে পথ দেখাইনি?” আমি বললাম ,“হ্যাঁ, আমার রব।” আলাহ্ বললেন, “আমি কি তোমাকে অভাবগ্রস্ত অবস্থায় পেয়ে ধনী করেনি?” আমি বললাম, “হ্যাঁ অমার রব!” আলাহ্ বললেন আমি কি তোমার বক্ষ প্রশস্ত করেনি?” আমি কি তোমা থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেয়নি, যা তোমার পিঠ ভারাক্রান্ত করে দিয়েছিল? আমি কি তোমার যিকির উচ্চ করেনি?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, হে আমার রব!” অতঃপর আমি মনে করলাম যে, নিশ্চয়ই তা জিজ্ঞাসা না করলে ভাল হত। হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫। মহান আলাহ্ তা‘আলা বলেছেন,“আমার মু‘মিন বান্দা আমার নিকট কোন কোন ফেরেশতা থেকে (অধিক) প্রিয়তর।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা আবূ হুরায়রা (রা)এর সূত্রে রেওয়ায়েত করেছেন।
৬। আমার যখন আকাশ সফরে নেয়া হল, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। তখন আমি দেখলাম আরশের ডান পার্শ্ব লিখা আছে “আলাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, হযরত মুহাম্মদ সলালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আলাহ্র রাসূল, আমি তাকে মর্যাদা দ্বারা সাহায্য করেছি।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হামরা থেকে বর্র্ণনা করেছেন।
৭। আমার উম্মতের হিসাব আমার উপর ছেড়ে দেবার জন্য, আমি আলাহ্ তা‘আলার নিকট আবেদন করলাম, যেন তারা অন্যান্য উম্মতের সামনে অপমানিত না হয়, তখন মহান ও মর্যাদাশীল আলাহ আমার উপর ওহী প্রেরণ করলেন, “হে মুহাম্মদ! বরং আমি তাদের হিসাব গ্রহণ করব। অতঃপর যদি তাদের কোন ত্র“টি হয়, আমি তা তোমার কাছেও গোপন রাখবÑ যেন তারা তোমার নিকটও অপমানিত না হয়।” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা আবূ হুরায়রা (রা)Ñ থেকে বর্ণনা করেছেন।
৮। আমি আমার মহান ও মর্যাদাবান প্রতিপালকের নিকট আমার উম্মতের জন্য তিনটি বস্তুর জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে দুটি দান করলেন এবং একটি নিষেধ করলেন। আমি বললাম, “হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মতকে ক্ষুধার দ্বারা ধ্বংস করো না।” আলাহ্ বললেন ঠিক আছে। আমি বললাম, “তাদের ওপর তাদের কোন শত্র“কে অর্থাৎ মুশরিককে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো না। তাহলে তারা তাদের মূলোৎপাটন করবে।” আলাহ্ বললেন, “তোমাদের জন্য এটাও কবুল করলাম।” আমি বললাম, “হে আমার প্রতিপালক! তাদের পরস্পরের মধ্যে শক্তির প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করো না।” তখন আলাহ্ আমাকে তা বলতে নিষেধ করলেন। তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রা)-এর সূত্রে, তিনি হযরত আলী (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৯। শেষ বিচার দিবসে একজন নবী একটি লোক, আরেকজন নবী দুটি লোক সাথে নিয়ে আগমন করবেন এবং আরেকজন নবী তিন বা ততোধিক লোক সাথে নিয়ে আগমন করবেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি তোমার গোত্রের নিকট আলাহ্র বাণী পৌছিয়েছ ? তিনি বলবেন,‘হ্যাঁ’ তখন তার উম্মতকে আহবান করা হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, এ ব্যক্তি কি তোমাদের নিকট আমার নির্দেশ পৌছিয়েছে ? তারা বলবে না, তখন তাকে (নবীকে) জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন ব্যক্তি তোমার স্বপক্ষে সাক্ষ্যদান করবে ? তিনি বলবেন, মুহাম্মদ সলালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ও তার উম্মত। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে এ নবী তার গোত্রের নিকট বাণী পৌছিয়েছিলেন ? তারা বলবে ‘হ্যাঁ’ তখন আলাহ্ জিজ্ঞাসা করবেন, তোমরা তা কিরূপে জানলে ? তারা বলবে, আমাদের নিকট আমাদের নবী এসেছিলেন এবং আমাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছিলেন যে ,অন্য নবীগণ নিজ নিজ উম্মতের কাছে আলাহ্র বাণী পৌছিয়ে দিয়ে ছিলেন। আমরা তাঁকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করেছিলাম। তাই আলাহ্র সে বাণী ঃ “এরূপভাবে আমি তোমাদেরকে ন্যায়পরায়ণ ও মধ্যমপন্থী উম্মত করেছি, যেন তোমরা জনগণের পক্ষে সাক্ষী হতে পার, আর রাসূলও যেন তোমাদের স্বপক্ষে সাক্ষী হতে পারেন।” (সূরা বাকারা ঃ ১৪৩) ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ সাঈদ (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
Leave a Reply