পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব মহান আল্লাহরই, তিনি ওদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত, সুস্পষ্ট গ্রন্থে সব কিছুই আছে। সূরা : হুদ ঃ আয়াত : ৬
এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অমিতব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। সূরা : ফুরকান ঃ আয়াত : ৬৭
১. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ধন-সম্পদ বেশী থাকলেই ধনী হওয়া যায় না। বরং প্রকৃত ধনী হলো আত্মার ধনে ধনী। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “সেই লোক সফলতা লাভ করেছে, যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং তাকে প্রয়োজন মাফিক রিযিক দেয়া হয়েছে আর মহান আল্লাহ্ তা’আলা তাকে যা কিছুই প্রদান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকার তওফীক দান করেছেন। (মুসলিম শরীফ)
৩. হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি সর্বদা ভিক্ষা করে বেড়ায়, মহান আল্লাহ্ তা’আলার সঙ্গে দেখা করার সময় তার মুখমন্ডলে এক টুকরো গোশ্তও থাকবে না। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৪. হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে বসে দান-খয়রাত সম্পর্কে এবং কারো কাছে কোন কিছু না চাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ঘোষণা করেন, উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে সর্বোত্তম। উপরের হাত হলো দানকারীর হাত এবং নীচের হাত হলো ভিক্ষুকের হাত। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে লোক মাল বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে লোকজনের কাছে ভিক্ষা করে প্রকৃতপক্ষে সে আগুনের টুকরা ভিক্ষা করছে এখন চাই সে অল্পই করুক কিংবা বেশীই করুক। (মুসলিম শরীফ)
৬. হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অপর কোন লোকের নিকট কোন কিছু চাওয়াই হচ্ছে আহত হওয়া। এর বিনিময়ে ভিক্ষাকারী তার সমস্ত মুখমন্ডলকে আহত করে কিন্তু বাদশাহর কাছে চাওয়া বৈধ। (তিরমিযী শরীফ)
৭. হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন লোক অভাব অনটনে পড়লে, তা যদি জনসমক্ষে প্রকাশ করে তবে তার এ অভাব অনটন দুর হবে না। আর যদি কোন লোক তার অভাব সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তা’আলার শরনাপন্ন হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি হোক কিংবা বিলম্বে হোক মহান আল্লাহ্ তাকে রিযিক দিবেনই। (আবু দাউদ ও তিরমিযী শরীফ)
৮. হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে লোক আমার সঙ্গে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে কারো কাছে কোন কিছু চাইবেন না। আমি তার জন্যে বেহেশতে জামিন হবো। একথা শুনে আমি বললাম আমি ওয়াদা করছি। রাবী বলেন এরপর হতে তিনি কারো কাছে কোন কিছু চাননি। (আবু দাউদ শরীফ)
৯. হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সে ব্যক্তি দরিদ্র নয়, যে একটি লুকমা ও দু’টি লুকমা অথবা একটি খেজুর বা দু’টি খেজুরের জন্য লোকজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে, বরং সেই প্রকৃত দরিদ্র, যার কাছে এ পরিমান মাল নেই যে, সে পরমুখাপেক্ষী না হয়ে থাকতে পারে। আর কারো জনাও নেই যে, তাকে কিছু সদকা করবে, আর সেও উপযাচক হয়ে কারো কাছে কিছু চায় না। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১০. হযরত আবূ বিশর কাবীসা ইবনে মুখারিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে কিছু সাহায্য চাইলাম। তিনি বললেন, অপেক্ষা করো এর মধ্যে আমাদের কাছে সদকার মাল এসে গেলেই তোমাকে দেবার আদেশ দেবো। তিনি পুনরায় বললেন, হে কাবীসা! তিন ধরণের লোক ব্যতীত আর কারো জন্য ভিক্ষা করা বৈধ নয়। তারা হলো (১) যে লোক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত ভিক্ষা চাইতে পারে, তারপরে বিরত থাকতে হবে। (২) যে ব্যক্তি এমন দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়লো যার ফলে মালসম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়, সেও তার প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজন পরিমান চাইতে পারে। (৩) যে লোক অভাব অনটনের শিকার হয়েছে এবং তার গোত্রের তিনজন সচেতন ব্যক্তি প্রত্যয়ণ করেছে যে, অমুকের ওপর অভাব অনটন হানা দিয়েছে। তার জন্যও প্রয়োজন মেটানো পরিমান সাওয়াল করা বৈধ অথবা তিনি বলেন, অভাব দুর করতে পারে এই পরিমান অর্থ চাওয়া বৈধ। হে কাবীসা! এই তিন ধরনের ব্যক্তি ছাড়া সবার জন্য কারো কাছে হাত পাতা হারাম এবং এভাবে যে হাত পাতে আসলে সে যা খায় তা হারাম খায়। (মুসলিম শরীফ)
Leave a Reply