“তোমরা মহান আলাহ তা’আলার ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর এবং নিকট আত্মীয় ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও ভাল ব্যবহার কর। নিকট প্রতিবেশী দূর প্রতিবেশী, চলার সাথী, পথিক মুসাফির এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদের প্রতি অনুগ্রহ কর।” (সূরা ঃ নিসা ঃ আয়াত ঃ ৩৬)
“সেই মহান আলাহকে ভয় কর যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ হতে যার যার হক দাবী কর এবং আত্মীয় সূত্র ও নিকটত্বের সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। মহান আলাহ তা’আলা তোমাদের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখছেন।” (সূরা ঃ নিসা ঃ আয়াত ঃ ১)
“বুদ্ধিমান লোক তারাই যারা মহান আলাহ যে সব সম্পর্কে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা বহাল রাখে ……..” (সূরা ঃ রদ ঃ আয়াত ঃ ২১)
১. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যে লোক মহান আলাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে লোক মহান আলাহ ও আখিরাতের জীবনে বিশ্বাসী যে যেন ভাল কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
২. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, মহান আলাহ তা’আলা তার সৃষ্টিকূলের সৃষ্টির কাজ শেষ করে যখন অবসর হলেন তখন রাহেম দাঁড়িয়ে বলল, এ স্থানটি কি ঐ লোকের জন্য সে আত্মীয়রার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে বাঁচার জন্য আপনার কাছে আশ্রয় চায়। তিনি বললেন, হ্যাঁ! তুমি কি এ কথায় সন্তুষ্ট হবে, যে তোমাকে বজায় রাখবে আমি তার প্রতি অনুগ্রহ করা এবং যে তোমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করব? রাহেম বলল, হ্যাঁ! আমি সন্তুষ্ট হব। মহান আলাহ তা’আলা বললেন, এ স্থানটি তোমার। অতঃপর রসুলুলাহ (সঃ) বললেন, যদি তামরা চাও তবে এই আয়াত পাঠ কর। “এখানে তোমাদের হতে এ অপেক্ষা আরো কিছুর আশা করা যায় কি? তোমরা যদি উল্টো মুখে ফিরে যাও। তবে পৃথিবীতে আবার তোমরা বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে এবং পরস্পর একজন অপরজনের গলা কাটবে? এসব লোক এমন যাদের উপর মহান আলাহ অভিশাপ বর্ষণ করেছেন এবং তাদেরকে অন্ধ ও বধির করে দিয়েছেন।” (সূরা ঃ মুহাম্মদ ঃ আয়াত ঃ ২২, ২৩। (বোখারী ও মুসলিম)
বোখারীর আর এক রেওয়াতে বলা হয়েছে, মহান আলাহ তা’আলা বলেন, যে তোমাকে বজায় রাখবে আমি তাকে অনুগ্রহ করব। যে তোমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করব। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৩. হযরত আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যে লোক নিজের রিযিক প্রশস্ত হওয়া এবং নিজের আয়ুস্কাল বৃদ্ধি হওয়া পছন্দ করে যে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৪. হযরত আবদুলাহ ইবনে আমর রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুলাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, ইহসানের পরিবর্তে ইহসানকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী নয়, বরং আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী ঐ ব্যক্তি, যার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী ঐ ব্যক্তি, যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর সে পুনরায় তা স্থাপন করল। (বোখারী শরীফ)
৫. হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়ালাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, রাহেম আরশের সঙ্গে ঝুলানো রয়েছে। সে বলে, যে আমাকে জুড়ে দিবে মহান আলাহ তাকে জুড়ে দিবেন যে আমাকে ছিন্ন করবে মহান আলাহ তাকে ছিন্ন করবেন। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৬. হযরত আমর ইবনুল আস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুলাহ (সঃ) -কে গোপনে নয়, প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি, অমুকের বংশধররা আমার বন্ধু বা পৃষ্ঠপোষক নয়। আমার বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক হলেন মহান আলাহ তা’আলা এবং নেককার মু’মিনগণ। তবে তাদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আমি তা অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করব। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৭. হযরত সালমান ইবনে আমির রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসুলুলাহ (সঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেহ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, কেননা এতে বরকত আছে। যদি সে খেজুর না পায়, তবে পানি দিয়ে ইফতার করবে, কেননা এটা পবিত্র বা পবিত্রকারী। তিনি আরো বলেন, মিসকীনকে দান-খয়রাত করা সাদকা হিসাবে গণ্য। আত্মীয়-স্বজনের জন্য দুটি কথা- (১) দান-খয়রাত করা এবং (২) আত্মীয়তার সম্পর্ককে বজায় রাখা। (তিরমিযী শরীফ)
Leave a Reply