21 Nov 2024, 05:49 pm

পিতা-মাতা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদীসে রসুল (সঃ) এর বাংলা অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

“তোমরা সবাই মহান আল­াহ তা’আলার ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর এবং নিকট আত্মীয় ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও ভাল ব্যবহার কর। নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, চলার সাথী, পথিক মুসাফির এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদের প্রতি অনুগ্রহ কর।” (সূরা ঃ নিসা ঃ আয়াত ঃ ৩৬)
“সেই মহান আল­াহকে ভয় কর যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ হতে যার যার হক দাবী কর এবং আত্মীয় সূত্র ও নিকটত্বের সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। মহান আল­াহ তা’আলা তোমাদের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখছেন।” (সূরা ঃ নিসা ঃ আয়াত ঃ ১)
“তোমাদের প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা কেবলমাত্র তারই ইবাদত করবে এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তোমাদের কাছে যদি তাদের কোন একজন অথবা উভয়ই বৃদ্ধাবস্থায় থাকে তবে তোমরা তাদেরকে উহ! পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে ভৎসনা করবে না। বরং তাদের সঙ্গে বিশেষ মর্যাদা সহকারে ভদ্রভাবে কথা বলবে। বিনয় ও নম্রতা তাদের জন্য সম্প্রসারিত করবে। আর এ দু’আ করতে থাকবে, যে প্রভু এদের প্রতি রহম কর, যেমন করে তারা স্নেহ বাৎসল্য সহকারে বাল্যকালে আমাকে লালন পালন করেছেন।” (সূরা ঃ বনী ইসরাঈল ঃ আয়াত ঃ ২৩ ও ২৪)

১. হযরত আবূ আবদুল­াহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-কে জিজ্ঞেস করলাম! কোন কাজটি মহান আল­াহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, ঠিক সময়ে নামায পড়া। আমি আবার বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মহান আল­াহ তা’আলার রাস্তায় জিহাদ করা। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
২. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম ঘোষণা করেন, কোন সন্তানই তার পিতার প্রতিদান আদায় করতে সক্ষম নয়। কিন্তু সে যদি তাকে দাস অবস্থায় দেখে এবং ক্রয় করে আযাদ করে দেয়। (মুসলিম শরীফ)
৩. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া  রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম! আমার কাছ হতে সদ্ব্যববহার ও সৎসঙ্গ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী অধিকারী কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা, সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা, সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা, সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। ( বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
(অপর এক বর্ণনায় আছে। ইয়া রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম আমার কাছ হতে সদ্ব্যববহার ও সৎসঙ্গ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী হকদার কে? তিনি বললেন, তামার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার পিতা, অতঃপর তোমার নিকট আত্মীয়।
৪. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, ঐ লোকের নাক ধুলি মলিন হোক ঐ লোকের নাক ধুলি-মলিন হোক, ঐ লোকের নাক ধুলি-মলিন হোক, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েও তাদের সেবাযতœ করেও বেহেশতে যেতে পারল না। (মুসলিম শরীফ)
৫. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- এক লোক বলল, ইয়া রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম! আমার এরূপ আত্মীয় রয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে। আমি তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। আমি তাদের ব্যাাপরে ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু তারা সর্বদাই মূর্খতার পরিচয় দেয়। তিনি বললেন, তুমি যেমন বলেছ সত্যিই যদি তেমনটি হয়ে থাকে, তবে তুমি যেন তাদেরকে গরম ছাই খাওয়াচ্ছ। তুমি যত সময় তোমার উলে­খিত কর্মনীতির উপর থাকবে মহান আল­াহর সাহায্য সর্বদা তোমার সঙ্গে থাকবে এবং তিনি তাদের ক্ষতি হতে তোমাকে বাঁচাবেন। (মুসলিম শরীফ)
৬. হযরত আবদুল­াহ ইবনে আমর রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন লোক রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-এর সামনে এসে বলল, আমি আপনার কাছে জিহাদ ও হিজরাত করার বায়আত কবুল করতে চাই এবং মহান আল­াহ তা’আলার কাছে প্রতিদান আশা রাখি। তিনি বললেন, তোমার পিতা-মাতার কেহ কি জীবিত আছে? সে বলল, হ্যাঁ, বরং উভয়ই। তিনি বললেন, এরপরও তুমি মহান আল­াহর কাছে প্রতিদান আশা কর? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, পিতা-মাতার কাছে যাও। তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর এবং তাদের খেদমত কর। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৭. হযরত আসমা বিনতে আবূ বকর রাদিয়াল­াহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-এর জীবদ্দশায় আমার মা আমার কাছে কিছু চাওয়ার জন্য আসলেন। তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। আমি রাুলুল­াহ সা­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-কে জিজ্ঞেস করলাম। আমার আম্মা আমার কাছে কিছু চাওয়ার জন্য এসেছে। আমি কি আমার মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁর সঙ্গে সৌজন্যমূলক ব্যবহার কর। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৮. হযরত আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করল, তিনি (রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম) তোমাদের কি হুকুম করেন? আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল­াহু আনহু বলেন, আমি বললাম তিনি বলেন, তোমরা এক মহান আল­াহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে অন্য কিছু শরীক কর না, এবং তোমাদের পূবর্-পুরুষরা যা বলেছে তা পরিত্যাগ কর। তিনি আমাদের নামায, সত্যবাদীতা, পবিত্র জীবন-যাপন এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা ইত্যাদি কাজের নির্দেশ দেন। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৯. হযরত আবু দারদা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, আমার একটি স্ত্রী আছে। কিন্তু আমার মা তাকে তালাক দেয়ার জন্য হুকুম করেছেন। আবূ দারদা বললেন, আমি রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-কে ইরশাদ করতে শুনেছি। পিতা-মাতা বেহেশতের দরজাগুলোর মধ্যে একটি মজবুত দরজা। এখন তুমি ইচ্ছা করলে দরজাটি ভেঙ্গেও দিতে পার অথবা হিফাযতও করতে পার। (তিরমিযী শরীফ)
১০ হযরত বারা’আ ইবনে আযিব রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেন, খালা মায়ের স্থলাভিষিক্ত। (তিরমিযী শরীফ)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *