22 Nov 2024, 02:59 pm

যশোরে এক ভবনেই একাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ইয়ানূর রহমান : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে একেকটি ভবনে গড়ে উঠেছে ৪-৫টি করে বেসরকারি হসপিটাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের ৫০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠান। আর এসব অধিকাংশই দালাল নির্ভর প্রতিষ্ঠান ।

আনুমানিক ২৫০ বর্গফুটের একেকটি কক্ষে ৫-৬টি শয্যা। এসব হাসপাতালে নেই মানসম্মত অপারেশন থিয়েটার। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উন্নতমানের যন্ত্রপাতির পরিমাণও কম।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষদের টার্গেট করে গড়ে তোলা এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পপুলার, ইউনিক, ল্যাবজোন, কমটেক, অর্থোপেডিক ক্লিনিক, নিরাময় ডেন্টাল কেয়ার ও স্ক্যান হসপিটালসহ মোট ১৫টি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। সব গুলোর
অবস্থান পাশাপাশি ভবনজুড়ে। একই ভবনের ওপরে ও নিচে রয়েছে ৪-৫টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা না মেনে এ গুলোর মালিকরা নিজেদের ইচ্ছা মাফিক প্রতিষ্ঠান গড়ে বহাল তবিয়তে কার্যক্রম চালাচ্ছে। একই ভবনে একাধিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কারণে রোগী ও তাদের স্বজনরা বিড়ম্বনার
শিকার হচ্ছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল আসা রোগীদের টার্গেট করেই মূলত সরকারি হাসপাতালের সামনেই সারিবদ্ধভাবে চিকিৎসা সেবার এ সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অথচ ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ অধ্যাদেশে বে-সরকারি হাসপাতাল গঠন ও পরিচালনার দিক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালের ৩০০ গজের মধ্যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক থাকতে পারবে না। তবে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনের দৃশ্য পুরোটায় ভিন্ন। এখানে বে-সরকারি  হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করার ক্ষেত্রে মানা হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া কোন নির্দেশনা ও কোন নিয়মনীতি।

জানা যায়, বে-সরকারি এ সব হাসপাতালে ঠিকমত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। নিম্নমানের ও অনুমোদনহীন এ সব বে-সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের দালালদের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, একই ভবনে  গড়ে ওঠা একাধিক বে-সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন সরকারি  হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা সেখানে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
সেখানে  তারা নিয়মিত রোগী দেখার পাশাপাশি অপারেশনসহ অন্যান্য সেবা দিচ্ছেন। প্রাইভেট চেম্বারে বসে প্রতিদিন আয় করছেন বিপুল পরিমাণ টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, নামসর্বস্ব এ সব হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসেবার কোন পরিবেশ নেই। দালালের ওপর ভর করেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। দালালরা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনার পর সেখানে গলাকাটা অর্থ বাণিজ্য করা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকলেও হাসপাতাল হিসেবে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গরিনাথপুর গ্রামের শিল্পী বেগম জানান, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি জেনারেল হাসপাতালের সামনে একটি বেসরকারি হসপিটালে চিকিৎসার জন্য যান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে তার কাছ থেকে ৫ হাজার
টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ওষুধ সেবন করে তার রোগ আরও বেড়েছে। তিনি না বুঝে নামসর্বস্ব ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সব হাসপাতাল গড়ে তোলার পেছনে রয়েছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কখনো নিজের নামে, কখনো আবার অন্যের নামে এসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা। আর্থিকভাবে লাভবান হতে তারা একই
এলাকায়  পাশাপাশি ভবনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, একই ভবনে একাধিক হাসপাতাল ক্লিনিক স্থাপনের কারণে রোগীদের বিড়ম্বনার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরে নির্দেশনা মেনেই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক
সেন্টার পরিচালনা করতে হবে। নানা অনিয়মের কারণে ইতোমধ্যে অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9835
  • Total Visits: 1268860
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ২:৫৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
18192021222324
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018