24 Nov 2024, 09:43 am

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে আতঙ্কের পাহাড়ে উন্নয়নের ছোঁয়া

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আজ ২ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় দু’দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি নামে পরিচিত। সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

এ কথা অনস্বীকার্য যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাল্টে যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি। অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে নেমে আসে শান্তির বাতাবরণ। শুরু হয় উন্নয়ন কার্যক্রম। জনজীবনে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক অবস্থা, পাল্টে গেছে জীবনধারা। অর্থনৈতিক কর্মকা-ে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য, পাহাড়ি-বাঙালির জীবনে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাত্র সাতটি বৈঠকের মাধ্যমে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করা সম্ভব হয়।
শান্তি চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ দুই যুগের দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামার অবসান ঘটিয়ে শান্তি উন্নয়ন ও সম্প্রীতির পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরে চলা নীতির জন্যই এখানে এখনো স্থায়ী শান্তি ফিরে আসেনি।

অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে বিগত ২৪ বছরে বেশ কিছু পদক্ষপে গৃহীত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩টি দপ্তর-সংস্থার মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৩০টি, খাগড়াছড়িতে ৩০টি এবং বান্দরবানে ২৮টি হস্তান্তর করা হয়েছে। ভূমি বিরোধ নিষ্পিত্তি করতে গঠন করা হয়েছে ভূমি কমিশন। ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২৩টি পাহাড়ি শরণার্থী পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
সংসদ উপনেতার নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল-২০১০ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকদের নির্ধারিত কোটা অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৃ-গোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে জারিকৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে। ভূমি বিষয়ক আইন ও বিধিমালা ছিল না। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন ২০০১ প্রণয়ন এবং ২০১৬ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিকভাবেও উন্নয়ন হয়েছে। বহু উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন বাজটে ছিল ৫০ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা, আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ হয়েছে ৯১৫ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা। তিন পার্বত্য জেলায় দুই হাজার ৮৯৯ কিলোমিটার বিদু্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্গম হওয়ার কারণে যেখানে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদু্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয়, এ রকম পাঁচ হাজার ৫০০টি পরিবারকে সৌর বিদু্যুৎ সুবিধা প্রদানের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

শান্তি চুক্তির আগে পার্বত্য অঞ্চলে মাত্র ২০০ কিলোমিটার রাস্তা ছিল। রুমা ও থানচি উপজলোর সাঙ্গু নদীর ওপর কোনো সেতু ছিল না। এখন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাস্তা ও বিভিন্ন আকারের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করেছে। শান্তি চুক্তির পর এক হাজার ৫৩২ কিলোমটিার পাকা রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ইতোমধ্যে সারাদেশে ১শ’ সেতু নির্মাণের মধ্যে ৪৫টি সেতু পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্মিত হয়েছে। প্রায় ১০৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারে রয়েছে।
শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে টেলিযোগাযোগ, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতা বৃদ্ধি এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা হয়েছে, যা শান্তি চুক্তির আগে ছিল না বললেই চলে। চুক্তির আলোকে পার্বত্য জেলায় কৃষি, স্বাস্থ্য, নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি বেশকিছু এলাকা পর্যটন উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় দারিদ্র্য বিমোচন তথা জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকশ পরবিারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় চুক্তির আলোকে পার্বত্য জেলায় বেশকিছু এলাকা পর্যটন উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে, যা এখন দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গায় পরিণত হয়েছে।

কিছু নিতান্তই দুর্গম এলাকা বাদ দিলে ছোট ছোট বাড়ির ছাদে দেখা যাবে ‘আকাশ’ ডিশ এন্টেনা, টেলিভিশনের রঙিন বাক্স কিংবা মোবাইল ফোনে পরিবর্তিত জীবন। রঙিন পোশাকে লাইন ধরে স্কুলে যাচ্ছে ছোট্ট শিশুরা। বাজার-ঘাটে ঘুরলেই দেখা যায়, নগর জীবনের ছাপ লেগেছে প্রত্যন্ত এ পাহাড়ি অঞ্চলেও। অথচ এমন একটা সময় ছিল- বিকেল ৪টায় নেমে আসত মধ্যরাতরে অন্ধকার। চলাচল বন্ধ, শঙ্কা আর আতঙ্ক চারদিকে।

গুলি আর পাল্টা গুলির শব্দ রাতভর। ২ যুগে সময়টা পাল্টেছে। অন্ধকারে এখন আলোর ছোঁয়া। উন্নয়নের আলোকস্পর্শ পাল্টে দিয়েছে সব কিছু। এরপরও রয়েছে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দোলাচল।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহদুর উসুচিং এমপি বলেন, এ সরকার চুক্তি করেছে বলেই পাহাড়ে এখন শান্তি বিরাজ করছে, উন্নয়ন হচ্ছে। পার্বত্যবাসীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছে। তাছাড়া ভূমি সমস্যার কাজও প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে যেটুকু সমস্যা আছে তা সমাধান হবে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ সামাজিকভাবেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
এসব ইতিবাচক দিকের মধ্যেও যে প্রশ্নটি সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো চুক্তির ২৪ বছর পরেও পুরোপুরি শান্তি প্রতিষ্ঠা কেন হলো না, কেন এখনো সংঘাতের ঘটনা ঘটছে? চাঁদাবাজি কী কারণে বন্ধ করা গেল না? শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরায়গুলো কী? কারা শান্তি চায় না? কারা এ ধরনের পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছরে এমন কিছু প্রশ্ন, কিছু সংশয় জনমনে রয়ে গেছে। বর্তমান সরকার বিগত ২৪ বছরে শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করেছে।

চুক্তির অবশিষ্ট ১৫টি ধারা আংশিক এবং ৯টি ধারা বর্তমানে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শান্তি চুক্তির আংশিক ও অবাস্তবায়িত ধারাগুলো বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য জেলায় শান্তি আনয়নের পাশাপাশি ওই এলাকায় অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধনের মাধ্যমে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক মানোন্নয়নে সরকার যথেষ্ট সচেষ্ট রয়েছে।

এরপরও এ চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্কের শেষ হয়নি। সরকার পক্ষ বলছে, চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি ধারা বাস্তবায়িত হবে। অপর দিকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাহাড়িদের সশস্ত্র সংগঠনের লড়াইয়ে রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়। চুক্তির পর গত ২৫ বছরে চারটি পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের সংঘাত ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে অন্তত সাড়ে ৭ শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়াও এদের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে।

সংঘাত সহিংসতা মাঝে-মধ্যে পাহাড়ের সম্প্রতির ওপরও আঘাত হানছে। এত কিছুর পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চায় না, এমন গোষ্ঠীর অভাব নেই। চাঁদাবাজি, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক চোরাচালানে লিপ্ত আছে একটি গোষ্ঠী। কর্তৃপক্ষের মতে, প্রতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয় পার্বত্য এলাকায়। ব্যবসা চালাতে গেলেই চাঁদা দিতে হয় সবাইকে। এই চাঁদাবাজি এতটাই নীরবে চলে যে, কেউ স্বীকার করতে চায় না। অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে গেছে। ক্ষুদ্র দোকানদার থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা সাধারণ চাকরিজীবী, কারোর রেহাই নেই। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করে না। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে পর এই চুক্তি বিরোধিতাকারী বিভিন্ন গোষ্ঠী এখন চাঁদাবাজিতে লিপ্ত।
চুক্তির স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাতে গেরিলা নেতা সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও এখনো পাহাড়ে প্রকৃত শান্তি ফিরে আসেনি। বরং চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ভেঙে একে একে গঠিত হয় ইউপিডিএফ (প্রসিত), জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের।

ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এখনো সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি। সাধারণ পাহাড়িদের মধ্যেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। তাদের মতে, চুক্তিতে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং হানাহানি বেড়েছে। মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। এছাড়াও এই চার সংগঠনের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজিও অভিযোগ রয়েছে। ভ্রাতিঘাতী সংঘাতে অসংখ্য মানুষের হতাহতের ঘটনা পাহাড়ে বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। চার সংগঠনের সহিংসতা মাঝে-মধ্যে পাহাড়ের সম্প্রতির ওপরও আঘাত হানছে।
এর মধ্যেও তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ২ ডিসেম্বর শুক্রবার ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ তথা ‘শান্তি চুক্তি’র রজতজয়ন্তী উৎসব পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য জেলা পরিষদ আয়োজন করেছে রোডশো, সম্প্রীতি নৃত্য, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আর সেনাবাহিনী তিন পার্বত্য জেলায় এ দিবসটি ঘিরে শান্তি র‌্যালি, আলোচনা সভা, চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম, মানবিক সহায়তা, প্রমিলা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং সম্প্রীতি কনসার্টের।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা), জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গ্রুপ তিনটি দিবসকে ঘিরে আলোচনা সভাও সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনকে আওয়ামী লীগের জন্য বড় সাফল্য- এই বিবেচনায় তিন পার্বত্য জেলায় আওয়ামী লীগও আয়োজন করছে নানা কর্মসূচি।
পাহাড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ॥ খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি গ্রামের নিরঞ্জন চাকমা বলেন, আমরা হানাহানি চাই না। আমাদের জবর দখলকৃত ভূমি আমরা ফেরত চাই। সকলে মিলে মিশে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করতে চাই। পাহাড়িদের নিয়ে অনেকে রাজনীতি করে। কেউ আমাদের মূল সমস্যা নিয়ে কথা না বলে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
খাগড়াছড়ি পৌর শহরের স্কুল শিক্ষিকা চম্পা চাকমা বলেন, সাধারণ পাহাড়িদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
খাগড়াছড়ির মাস্টারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান করে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারগুলোকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ॥ খাগড়াছড়ি থেকে পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাসমূহ সংশোধনের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। একই সাথে ‘৩০ হাজার বাঙালি হত্যাকারী’ আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমার অপসারণ, পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্বার ও পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাহারকৃত সকল নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি জাননো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজি মজিবুব রহমান।
অন্যদিকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে অফিসার্স ক্লাবে দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ প্রদান ও জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ভ্রাম্যমাণ সংগীত পরিবেশনের উদ্বোধন করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে এ সকল কর্মসূচি উদ্বোধন করেন, প্রধান অতিথি ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সর চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 12775
  • Total Visits: 1288533
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৯:৪৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018