24 Nov 2024, 04:42 pm

রাজনৈতিক কারণে ক্ষুধার মহাস্রোতে প্রবেশ করছে বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজনীতি ও সামাজিকতার সঙ্গে মানবিক বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরকমই একটি স্পর্শকাতর মানবিক বিষয় হচ্ছে ক্ষুধা। ক্ষুধা এমন একটি অবস্থা যাতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন ব্যক্তি মৌলিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত খাবার খেতে অক্ষম। রাজনৈতিক কারণে ২০২৩ সালে ক্ষুধার বড় বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্যবিষয়ক কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্যসহায়তা বিতরণ সমন্বয় করে। সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন লোকের সংখ্যা ২০২১ সালের শেষে ২৮২ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৮ কোটি ২০ লাখে পৌঁছায়। কিন্তু ২০২২ সালে সেটি রেকর্ড পরিমাণে দাঁড়িয়েছে ৩৪৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩৪ কোটি ৫০ লাখে। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষ।

২০২৩ সালে মানুষ বিভিন্ন কারণে অভুক্ত থাকবে। আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া ও ইয়েমেনের মতো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কৃষিকাজ ব্যাহত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানে চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি, বিশেষ করে পাকিস্তানের বন্যা ও হর্ন অব আফ্রিকায় খরা, আরও সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠছে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো ধনী দেশ এবং ব্রাজিল ও ভারতের মতো বৃহৎ খাদ্য-উৎপাদনকারী দেশসহ সবখানেই সমস্যা কেবল দারিদ্র্য। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও মন্থর বিশ্ব অর্থনীতির মিশ্রণের অর্থ হলো অনেক লোক তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহে অর্থ প্রদানের জন্য সংগ্রাম করবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এখনও কোভিড-১৯ মহামারির কবলে পড়ে ভুগছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতির সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। ফলে এসব দেশের অনেক মানুষ অনাহারে থাকতে পারে।

এখন অব্দি সমস্যাটি মূলত প্রাপ্যতার পরিবর্তে দামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি বার্লি, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেল রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। ফলে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর চরমভাবে খাদ্যপণ্য সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধের ফলে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, সুদান, তানজানিয়া ও উগান্ডা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের গম রপ্তানির ৪০ শতাংশের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এর প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনা ও ভারতসহ অন্যান্য দেশেও বাণিজ্য বিধিনিষেধের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় খাদ্যপণ্যের দাম। জরুরি খাদ্যসহায়তা কর্মসূচিতেও ভাটা পড়ে। কেননা ডব্লিউএফপি সাধারণত ইউক্রেন থেকে বিতরণ করা গমের অর্ধেক পরিমাণে কেনে।

যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেন থেকে জাহাজে খাদ্যপণ্য সরবরাহ আবারও শুরু হলে বেশ কয়েকবার অবরোধের মধ্যে পড়ে। ফলে দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তবে কিছু এলাকায়, মুদ্রাস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য-মূল্য সূচক, যা খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্যের মাসিক পরিবর্তন জরিপ করে তারা বলছে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে খাদ্যপণ্যের সর্বোচ্চ দাম ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব খাদ্য-মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করা থেকে কেবল পর্যাপ্ত খাদ্য না পাওয়ার দিকে চলে যেতে পারে। নাইট্রোজেন সারের উৎপাদনে ধস নেমেছে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি বিঘ্নিত হওয়ায়, যা কৃষিকাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কৃষকরা কম সার ব্যবহার করছে, ফসল ফলাতে পরিবর্তন আনছে এবং উৎপাদন কমাচ্ছে।

২০২৩ সালে, মানুষ বিভিন্ন কারণে অভুক্ত থাকবে। আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া ও ইয়েমেনের মতো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কৃষিকাজ ব্যাহত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানে চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি, বিশেষ করে পাকিস্তানের বন্যা ও হর্ন অব আফ্রিকায় খরা, আরও সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠছে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো ধনী দেশ এবং ব্রাজিল ও ভারতের মতো বৃহৎ খাদ্য-উৎপাদনকারী দেশসহ সবখানেই সমস্যা কেবল দারিদ্র্য। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও মন্থর বিশ্ব অর্থনীতির মিশ্রণের অর্থ হলো অনেক লোক তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহে অর্থ প্রদানের জন্য সংগ্রাম করবে।

খাদ্য ঘাটতির পরিণতি খুব ভয়াবহ। দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার্ত থাকা হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অপুষ্টির মানে শুধু এই নয় মানুষ খুব কম খায় এবং তারা পাতলা হয়ে যায়। বিশেষ করে শহরে, যারা পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য রাখে না তার পরিবর্তে সস্তা, প্যাকেটজাত খাবার কেনে এবং দরিদ্র মানুষগুলোর স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ক্ষুধা বিপর্যয়ের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নারীরা। পরিবার দরিদ্র হওয়া এবং তাদের পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য না খেয়ে থাকার প্রবণতা বেশি। এফএও বলছে, ২০২১ সালে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষের তুলনায় বিশ্বের ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ নারী মাঝারি বা গুরুতরভাবে ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীন’ ছিলেন এবং সেই ব্যবধান আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

কেয়ার নামে একটি এনজিওর সমীক্ষায় দেখা যায়, কীভাবে লিঙ্গবৈষম্যের সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা সম্পৃক্ত। সোমালিয়ায় পুরুষরা বলে তারা অল্প খাবার খাচ্ছে, কিন্তু নারীরা বলে তারা খাবার এড়িয়ে যাচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে নাইজেরিয়ার এক নারী বলছেন, ‘আমরা সবার জন্য খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছি। শুধু আমার স্বামী ছাড়া কারণ তিনি পুরুষ।’

শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষুধা মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। শৈশবের মাত্র কয়েক মাসের পুষ্টিহীনতা একজন ব্যক্তির সুস্থ, উৎপাদনশীল জীবনযাপনের আশাকে কমিয়ে দিতে পারে। সাও পাওলোতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি নার্সারির প্রধান শিক্ষক ক্লডিয়া রুশো বলেন, তিনি দেখেন আরও বেশি শিশু সকালে নাশতার জন্য আসছে কারণ তারা আগের দিন নার্সারির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজের পর থেকে আর কিছুই খায়নি। এই শিশুরা ছোট, অসুস্থ এবং তাদের দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়। সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্নির্মাণ ও খাদ্যের দাম কমে যাওয়ার পরও বর্তমান খাদ্য সংকটের প্রভাব তাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী হবে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 13822
  • Total Visits: 1292894
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৪:৪২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018