অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফুকোইয়ামার মতো পাশ্চাত্যের অনেক চিন্তাবিদ মনে করেন ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর কমিউনিজমের মোকাবেলায় পাশ্চাত্যের লিবারেল ডেমোক্রেসি ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিজয় ঘটে এবং এটাকে ইতিহাসের শেষ অধ্যায় হিসেবে মনে করা হতো। কিন্তু পাশ্চাত্যের এই ব্যবস্থাও এখন নানামুখী সমস্যা ও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
এই সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সমাজ ও মানুষের প্রতি পশ্চিমা পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই ব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষরাই সম্পদের উৎপাদক এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র এবং পুরুষরাই শ্রেষ্ঠ। এ কারণে পাশ্চাত্য সরকার ব্যবস্থায় নারী পুরুষ সমান বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে ওই সমাজে নারীরা চরম বৈষম্যের শিকার এবং নানাভাবে নারীরা যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। যদিও ব্রিটেন ও আমেরিকার মতো পাশ্চাত্যের কোনো কোনো দেশ গত উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে নারী স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে আসে এবং নারীদের ভোট দেয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়ার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু তারপরও পাশ্চাত্যে নারীকে অর্থনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার বা পণ্য হিসাবে ব্যবহার করার কারণে অর্থনৈতিক অঙ্গনে তারা প্রবেশ করলেও বা ভূমিকা রাখলেও নানাভাবে নারীরা শোষণের শিকার হচ্ছে।
নারী অধিকারের দাবিদার পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে নারীদের অবস্থার দিকে নজর দিলে দেখা যায় তারা সেখানে খুব সম্মানজনক অবস্থানে নেই এবং তাদের বহু অধিকারকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। সামাজিক ও চাকুরী ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে ও তারা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও কানাডার মতো দেশগুলোতে বেতনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকেই এ তথ্য উঠে উঠেছে।
প্রকৃতপক্ষে, পাশ্চাত্য সমাজে এক সময় নারীদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হতো যাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টি ছিল না। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও তারা অতীতে তেমন সমর্থন পেত না এবং এখনও পায় না। নারীরা কেবল পুরুষের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানেও বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে পাশ্চাত্যে নারীদের দুরবস্থার বিষয়টি ফুটে ওঠে। গত এক দশক ধরে দশটি দেশের মধ্যে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার দিক থেকে আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে। পাশ্চাত্যে নারীদের অধিকার মেনে চলার যে দাবি করা হয় তা একেবারেই প্রতারণাপূর্ণ। পাশ্চাত্যে নৈতিকতার চরম অধঃপতন ঘটেছে যার শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা এবং নারীদের প্রতি ব্যাপক জুলুম ও বৈষম্য করা হয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে প্রতি বছর লাখ লাখ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়। এ ছাড়া নারীদের বিজ্ঞাপনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নারী স্বাধীনতার নামে তাদের ওপর জুলুম ও যৌন হয়রানি করা হয়। কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তাহীনতা, বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কর্মক্ষেত্রে ও জেলখানায় নারীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া, ভ্রূণ হত্যা, বর্ণবৈষম্য, নারী পাচার প্রভৃতির মাধ্যমে পাশ্চাত্যে নারী অধিকার লঙ্ঘন নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মহানবী (সা.)এর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা সালামুল্লা আলাইহার পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল (বুধবার) রাজধানীর তেহরানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ নেতা একদল নারীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে পাশ্চাত্যে নারীদের প্রকৃত অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থায় মানুষের মর্যাদা পুঁজির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় এবং পুরুষরা অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হওয়ায় নারীর ওপর পুরুষরা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কম মজুরিতে কারখানায় নারীদের ব্যবহার করার জন্য পশ্চিমে নারী স্বাধীনতার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজি মানবতার চেয়ে উচ্চতর এবং মানুষের মানবতা পুঁজির সেবায়। তাই যে বেশি পুঁজি সঞ্চয় করতে পারে সে আরও মূল্যবান। তিনি বলেন, পশ্চিমারা যখন নারীর অধিকারের ব্যাপারে নিজেদেরকে অগ্রপথিক বলে উপস্থাপন করে তখন তা চূড়ান্ত লজ্জা বলে পরিগণিত হয়। বরং এর বিপরীতে আসল সত্য হচ্ছে- পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্নভাবে নারীর মর্যাদা বিনষ্ট করেছে এবং নারীর অধিকার ধ্বংস করার ক্ষেত্রে তারাই দায়ী। নারীর অধিকারের পক্ষে পশ্চিমাদের ওকালতি চরম পর্যায়ের নির্লজ্জতা।
Leave a Reply