অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে একদল পুরুষ প্রায় একশ কিলোমিটার পথ পদযাত্রা করে একটি মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেছে যাতে করে তাদের ভাগ্যে বউ জোটে।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও হাস্যরসের জন্ম দিলেও অধিকারকর্মীরা বলছেন ওই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক সংকটের একটি চিত্রও ফুটে উঠেছে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে।
পদযাত্রাটি শুরু করেছিলেন ত্রিশ জনের একটি দল এবং শেষ পর্যন্ত এতে অংশ নিয়েছে ষাট জনের মতো। এরা সবাই ওই রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার কৃষক।
কয়েক দশক ধরেই এখানে নারী পুরুষের অনুপাতের পার্থক্য বেড়েই চলেছিলো এবং যে কারণে অনেক পুরুষই বিয়ের করার জন্য পাত্রী খুঁজে পায় না।
এছাড়া অনেকে আয় কম থাকা কিংবা নারীদের মধ্যে ভিন্ন গোত্রে পছন্দ করার ঘটনার কারণেও পাত্রী সংকট তৈরি হয়েছে।
অবিবাহিতদের পদযাত্রা বা ব্রক্ষ্মচারিগালু পদযাত্রা হিসেবে পরিচিত এই পদযাত্রায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন মাল্লেশা ডিপি।
তারা গিয়েছিলেন মহাদ্বেশাওয়ারা মন্দিরে যার ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
“যখন প্রেম করার বয়স ছিলো তখন আমি কাজ করেছি। অর্থ আয় করেছি। এখন আমার সব আছে কিন্তু বিয়ে করার জন্য পাত্রী পাচ্ছি না,” বলছিলেন মাল্লেশা।
অথচ তার বয়স মাত্র ৩৩। তবে তিনি মনে করে নিজ এলাকায় বিয়ে করার জন্য সঠিক বয়স তিনি অতিক্রম করে ফেলেছেন।
এই পদযাত্রা আয়োজক শিবপ্রসাদ কেএম বলছেন এই কর্মসূচির কথা ঘোষণার পর দুশো জনের মতো নিবন্ধন করেছিলো অংশ নেয়ার জন্য।
“কিন্তু পরে অনেকে অংশ নেননি কারণ স্থানীয় মিডিয়া এটিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছিলো,” বলছিলেন তিনি।
মান্ডিয়া একটি উর্বর কৃষি অঞ্চল। এখানে সবচেয়ে বেশি হয় আখ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি থেকে আয় কমে আসায় পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আরেকজন ৩১ বছর বয়সী কৃষ্ণ বলছেন যে এখন অনেকে মনে করে কৃষি পেশায় থাকা পরিবারগুলোর তরুণদের আয় রোজগার অনিশ্চিত।
মিস্টার মাল্লেশা বলছিলেন যে গত কয়েক বছরে অন্তত ত্রিশ জন নারী তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন তার পেশা আর একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করা।
“আমাদের বসবাসের জায়গা ছোটো এবং আয় কম,” বলছিলেন মি. শিবপ্রসাদ। তার মতে এ পেশার পাশাপাশি যাদের ব্যবসা বাণিজ্য আছে তাদের জন্য বরং বিয়ে করা সহজ।
ওদিকে অবিবাহিত এই যুবকেরা যখন বিয়ের আশায় পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছিলো তখন একদল কৃষক আখের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলো।
তবে এখনকার পাত্র পাত্রী বৈষম্যের জন্য অনেকে পুরুষতন্ত্রকেও দোষারোপ করেন। এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা যখন জন্মেছিলেন তখনি ওই অঞ্চলের নারী পুরুষ অনুপাতের বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছিলো।
১৯৯৪ সালে শিশু জন্মের আগে লিঙ্গ পরিচয় জানা নিষিদ্ধ করলেও গর্ভপাত অব্যাহত ছিলো বলে জানিয়েছেন একজন অধিকারকর্মী।
“এখনো আমি স্কুলে তাকালে দেখবেন সেখানে খেলার মাঠে ২০টি মেয়ের সাথে দেখবেন ৮০টি ছেলে,” বলছিলেন তিনি।
আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী সেখানকার নারী পুরুষ অনুপাত ২০১১ সালে ছিলো ৯৬০ নারীঃ ১০০০ পুরুষ, যা ২০০১ সালে ছিলো ৯৭১ নারীঃ ১০০ পুরুষ।
অন্যদিকে নারীদের পছন্দেও পরিবর্তন এসেছে।
জয়শীলা প্রকাশ মান্ডিয়ার হলেও তিনি এখন বাস করেন ব্যাঙ্গালুরুতে পরিবারের সাথে বাস করেন। যদিও তিনি বলছেন তিনি গ্রামে প্রকৃতির কাছে থাকতেই পছন্দ করেন।
তবে অনেক নারীই শহরমুখী হচ্ছেন আরও স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য।
কৃষক পরিবারের নারীকে বাইরে যেতে পরিবারের অনুমতি লাগে। কিন্তু এই প্রজন্ম এভাবে কারও ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না।
যদিও মি. মাল্লেশা বলছেন নারীদের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গিতেও এখন পরিবর্তন আসছে।
মি. শিবপ্রসাদ জানিয়েছেন তিন দিনের পদযাত্রা শেষে অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেরালার কৃষক পরিবারগুলো থেকেও একই অবস্থার কথা জানিয়ে অনেকে তাকে চিঠি লিখেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
Leave a Reply