অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নিজের সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে সেই টাকায় জুয়া খেলার ঘটনায় হোসনে আরা বেগম নামে এক মা’কে আটক করেছে চট্টগ্রামের পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন (পিবিআই)।
রবিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) পাঁচলাইশ মডেল থানার বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তার হোসনে আরা বেগম নিজের শিশু সন্তানের পায়ে পলিথিন মুড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দিতেন। সেই পোড়ার ক্ষত দেখিয়ে মেয়েকে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করিয়ে টাকা সংগ্রহ করে সেই টাকায় জুয়ার আখড়ায় লুডু খেলতেন হোসনে আরা।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল মো. রাশেদ, লিমুসহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনের বিরুদ্ধে তার মেয়ে রাশেদা আক্তারকে অপহরণের অভিযোগে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন হোসনে আরা বেগম। আদালত মামলাটি চট্টগ্রামের পিবিঅআইকে তদন্ত করার আদেশ দেন।
পরে চট্টগ্রাম মেট্রোর পিবিআইর উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জাহেদুজ্জামান চৌধুরী নারী ও শিশু মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে ভুক্তভোগী রাশেদা আক্তারকে উদ্ধার করে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে উপস্থাপন করেন। রাশেদা আদালতে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করে , সে বদনাশাহ মাজারের সামনে ভিক্ষা করত। তার মা হোসনে আরা বেগম পলিথিন দিয়ে তার পা পুড়িয়ে দিত। পোড়া পা দেখিয়ে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করত।
ভিক্ষার টাকা দিয়ে হোসনে আরা বেগম ছক্কা (জুয়া) খেলতেন। রাশেদার ছোট ভাই দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে ফেলায় তার চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। তখন রাশেদ ও লিমু তার মাকে আর্থিক সহায়তা করে। পরে রাশেদ ও লিমুর বাসায় রাশেদাকে গৃহকর্মী হিসাবে কাজে দেওয়া হয়।
পিবিআই এর তদন্তে উঠে আসে; টাকা আদায়ের জন্য রাশেদ ও লিমুর বিরুদ্ধে হোসনে আরা মিথ্যা অপহরণ মামলা করেন। অপহরণের ঘটনাটি সত্য নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পিবিআই।
আদালত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে রাশেদা আক্তারকে দিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি পেশায় জড়ানোর জন্য তার মা হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গত বছরে ১৯ নভেম্বর হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। পাঁচলাইশ মডেল থানার মামলা নম্বর-০৮। পরে আদালত ওই মামলার তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
পরে পিবিআই গত রবিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে পাঁচলাইশ মডেল থানার বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে অভিযুক্ত হোসনে আরা বেগম গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত হোসনে আরার বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, হোসনে আরা বেগম নিজের গর্ভজাত একমাত্র মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করান। ভিক্ষা করাতে গিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য তিনি তার সন্তানের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের সৃষ্টি করে। সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করানোর মাধ্যমে পাওয়া টাকা দিয়ে তিনি জুয়া তথা ছক্কা খেলেন।
এছাড়াও তার মেয়ে রাশেদা আক্তারকে গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে পরবর্তীতে গৃহের মালিকদের অহেতুক হয়রানি করে টাকা আদায়ের জন্য সে মিথ্যা মামলার করে। সোমবার হোসনে আরা বেগমকে চট্টগ্রাম মহানগর মূখ্য হাকিমের (সিএমএম) আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
Leave a Reply