অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নড়বড়ে শেয়ার ইস্যু যে কোনো ব্যাংককে ডুবিয়ে দিতে পারে। মূলধন বাড়াতে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) উদ্যোগ বিপর্যয় ঘটিয়েছে তা এরই মধ্যে প্রমাণিত। এবার বেসামাল হয়ে পড়েছে সুইজারল্যান্ডের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। গত ১৫ মার্চ ব্যাংকটি লক্ষ্য করে যে নড়বড়ে শেয়ারহোল্ডাররা অনেক ক্ষতি করতে পারে।
সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক, এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার। সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক নতুন ফান্ড দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর গত বুধবার একদিনেই শেয়ারের ৩০ শতাংশ দর পতন ঘটে প্রতিষ্ঠানটির।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রেডিট সুইসে আরও কোনো বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সৌদি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া খুব একটা সুখকর ছিল না।
বিনিয়োগকারীরা টাকা তোলার জন্য দৌড়াচ্ছেন। ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের দাম তার সর্বনিম্ন স্তরে এবং এক চতুর্থাংশ কমেছে। অন্যান্য ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর দরজায়ও কড়া নাড়ছে এ পরিস্থিতি। তবে সবশেষে সুইস নিয়ন্ত্রকরা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যেখানে বলা হয় ক্রেডিট সুইস বড় ব্যাংকগুলোর জন্য প্রযোজ্য মূলধন এবং তারল্যের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছে। তবে প্রয়োজনে তারা ব্যাংকটিকে সহায়তা প্রদান করবে।
১৬ মার্চের প্রথম দিকে, ক্রেডিট সুইস জানায়, এটি তারল্য বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেবে। ফলে এটি তার শেয়ারের দামে কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করে।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের কিছু নেই। তবুও তাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
আর্চেগোস ক্যাপিটালের সঙ্গে ক্রেডিট সুইসের লেনদেন থেকে বহু লোকসান গুনতে হয়েছে। এটি একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান যা ২০২১ সালে ভেঙে পড়ে এবং গ্রিনসিল ক্যাপিটাল, একটি সাপ্লাই-চেইন-ফাইনান্স ফার্ম যেটি সেই বছরেই ধসে পড়ে। গতবছর আমানতকারীরা ব্যাংকের প্রতিটি শাখা থেকে নগদ অর্থ তোলা শুরু করে। দীর্ঘমেয়াদি শেয়ারহোল্ডার হ্যারিস অ্যাসোসিয়েটস, একটি বিনিয়োগ সংস্থা, তার শেয়ারও বিক্রি করে ফেলেছিল। সেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নতুন মালিকদের।
৯ মার্চ ক্রেডিট সুইস আমেরিকার প্রধান আর্থিক নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের শেষ মুহূর্তের ফোনকলের পর তার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব ঘোষণা করে। ফলে ফার্মের আর্থিক-রিপোর্টিং সিস্টেমে ‘বস্তুগত দুর্বলতার’ কারণে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
শেয়ারহোল্ডাররা অবশেষে ১৪ মার্চ তাদের রিপোর্ট হাতে পায়। ২০২২ এর শেষে ক্রেডিট সুইস তার টানা পঞ্চম প্রান্তিকে লোকসানের কথা জানিয়েছে।
ক্রেডিট সুইসের প্রধান নির্বাহী উলরিচ কর্নার আশাবাদী যে ঘুরে দাঁড়াবে ব্যাংকটি। সিএস ফার্স্ট বোস্টন নামে পুনঃনির্মাণ করা বিনিয়োগ ব্যাংকের মাইকেল ক্লেইন এগিয়ে আসতে পারেন৷ তিনি ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ক্রেডিট সুইসের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে সুইস ক্রেডিট ব্যাংক তার বুটিক ব্যবসা ১৭৫ মিলিয়নে কিনেছিল। একটি বড় বুটিক বিনিয়োগ ব্যাংক গড়ার অভিপ্রায়কে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার কারণ রয়েছে। ক্রেডিট সুইস দীর্ঘকাল ধরে কর্পোরেট বাই-আউটের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছে।
ক্রেডিট সুইসের একটি বিকল্প হলো ইউবিএসের সঙ্গে টাই-আপ করা। জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে ইউবিএস এজির সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরামর্শও দিয়েছে।
ক্রেডিট সুইস হলো ১৬৭ বছরের পুরোনো একটি ব্যাংক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের মতো একের পর এক পর ব্যাংক আর্থিক গোলযোগের মধ্যে পড়ে। এর পরপরই ইউরোপের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের এমন ভারসাম্যহীনতার খবর মিলছে যেটির প্রভাব আরও গুরুতর হতে পারে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, রয়টার্স
Leave a Reply