December 3, 2025, 6:26 am
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহের মহেশপুরে তারুণ্যের উৎসবে কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প ও সঞ্চয় প্রনোদনা বিতরণ মাগুরায় টিআরের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রাষ্ট্রপতির ফেসবুক আইডি হ্যাকড ; জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা ; দেওয়া হচ্ছে এসএসএফের নিরাপত্তায় আগামী ৮ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হবে নির্বাচন ও গণভোট : ইসি আনোয়ারুল ইসলাম পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে খুলনায় আদালত চত্বরে জোড়া খুনের ঘটনায় একজন আটক নানা আয়োজনে বান্দরবানে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কারাগারে ইমরান খানকে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে : সাক্ষাতের পর বোন উজমা যুদ্ধ বন্ধের ‘অগ্রগতি’র পর ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করলেন জেলেনস্কি
এইমাত্রপাওয়াঃ

মেহেরপুরের প্রতিবন্ধী সাগর ভিক্ষা ছেড়ে এখন ব্যবসায়ী

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ঠেলা গাড়িতে ঘুরে ভিক্ষা করে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করতাম। সে রোজগারে কোনো বরকত ছিল না। ছিল না সম্মান। অনেক সময় পরিচিত লোক দেখে লজ্জায় মাথা নুইয়ে যেত আমার। ভিক্ষা করা খুবই লজ্জার একটি পেশা। ধর্মীয়ভাবেও এ পেশার স্বীকৃতি নেই। তাই আমি এখন আর ভিক্ষা করি না। এখন ব্যবসা করি। আগের ভিক্ষা করে পাওয়া হাজার টাকার চেয়ে ব্যবসা করে দুইশ টাকা রোজগার করা অনেক সম্মানের।’

জীবন বদলের এই কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামের মৃত পিয়ারুল ইসলামের প্রতিবন্ধী ছেলে সাগর আহাম্মেদ।

১৫ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করলেও তা ছেড়ে বর্তমানে ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তার জীবন বদলের কথা শুনে অনেকেই বাহবা দিচ্ছেন, আবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই।

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী ৩০ বছর বয়সী সাগর আহাম্মেদ। তার দুই পা একেবারেই অকেজো। হাত দিয়ে ঠেলা গাড়িতে চালিয়ে চলাফেরা করতে হয় তাকে।

সাগরের বয়স যখন চার মাস, তখনই মারা যান তার বাবা। পরে দুই বছর বয়সে মা মুনজিরা খাতুন অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান অন্যের সংসারে। শেষ আশ্রয় হিসেবে নানীর সংসারে বেড়ে ওঠেন সাগর আহাম্মেদ। সাগরকে লালন পালন করে বড় করেছেন বৃদ্ধা নানী মদিনা বেগম। ১৫ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে ঠেলা গাড়িতে করে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করতেন সাগর। ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনদিন ৪০০ টাকা আবার কোনদিন ৫০০ টাকা রোজগার হতো তার। তা দিয়েই বৃদ্ধা নানীকে নিয়ে সংসার চালাতো সাগর আহাম্মেদের।

ভিক্ষা করতে গেলেও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হতো তাকে। দুই পা অকেজো হওয়ায় দুই হাত দিয়ে পায়ের কাজটি করতে হয় তাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসি পান্তা খেয়ে সাগরকে ঠেলা গাড়িতে তুলে দিতেন নানী মদিনা বেগম। সারাদিন ভিক্ষা শেষে বাড়ি ফিরতেন সন্ধ্যা হলে। এভাবে টানা ১৫ বছর ভিক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে ওঠেন সাগর আহাম্মেদ। অবশেষে স্থানীয়দের পরামর্শে নিজের কিছু জমানো টাকায় গ্রামেই একটি ছোট দোকান দিয়ে বসেছেন তিনি। দোকানে বিক্রি করেন বাই সাইকেলের নানা সরঞ্জাম। এই দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে নানী ও তার সংসার।

সাগর আহাম্মেদ জানান, ছোট বেলায় বাবা মারা গেলে মা অন্যত্র বিয়ে করে আমাকে নানীর কাছে রেখে চলে যান। নানা বেঁচে না থাকায় নানীও বৃদ্ধা বয়সে কাজকর্ম করতে পারতো না। বাধ্য হয়েই আমাকে ভিক্ষা পেশায় নামতে হয়েছিল। ভিক্ষা করে ৫০০ টাকা রোজগার করতাম। এখন আমি ভিক্ষাবৃত্তি করি না। গাংনীর একটি দোকান থেকে বাইসাইকেলের পার্টসপাতি পাইকারি দামে কিনে নিয়ে এসে খুচরা বিক্রি করি। এখন এই দোকান থেকে দুই-একশ টাকা যা লাভ হয়, তা দিয়েই সম্মানের সঙ্গে জীবন চালাতে পারছি। এখন মনে হয় ভিক্ষা করে পাওয়া ৫০০ টাকার চেয়ে আমার ব্যবসার ২০০ টাকা অনেক বরকতের।

সাগর আহাম্মেদের নানী মদিনা বেগম জানান, ছোট বেলায় সাগরের বাবা মারা যায়। তখন সাগরের মা মুনজিরা বয়স খুবই অল্প। বিধবা মেয়ে ঘরে রাখা খুবই কষ্টের। তাই তার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও অন্যত্র বিয়ে দিতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সাগরকে আমি মা-বাবার আদর দিয়ে বড় করেছি। পরের বাড়িতে কাজ করে আমরা দু’জন সংসার চালাতাম। পরে আমার অনেক বয়স দেখে কেউ কাজে নিতে চাইতো না। বাধ্য হয়েই সাগরকে ভিক্ষার ঝুঁলি হাতে নিতে হয়েছিল। এখন সাগর আর ভিক্ষা করে না। গ্রামের একটি মোড়ে বাইসাকেলের পার্টসপত্র বিক্রি করে। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।

সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান জানান, সাগর আহাম্মেদ আগে ভিক্ষা করতো জানতে পেরে তাকে ভিজিডি ও ভিজিএফ এর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে তার খোজ খবর নেই। তবে এমন পরবির্তন খুবই ভালো লাগার বিষয়। ৩০ বছরের যুবক ভিক্ষা না করে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে সংসার চালাচ্ছে, এটি একটি উদাহরণও বটে।

গাংনী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরশাদ আলী জানান, সাগর আহাম্মেদকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়। তবে ১৫ বছর ধরে যে সাগর ভিক্ষা করেছে, সেই সাগর নিজেকে পরিবর্তন করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য এখন ব্যবসা করছে। এমন ইচ্ছাশক্তি সকলের মধ্যে তৈরি হলে ভিক্ষুকের সংখ্যা কমতে থাকবে। এরপরও সরকারি কোনো সুবিধা এলে সাগর আহাম্মেদের কথা আমাদের মনে থাকবে। শুধু সাগর নয়, অন্যরাও ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসায় এলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

আজকের বাংলা তারিখ

December ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Nov    
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  


Our Like Page