December 16, 2025, 9:29 pm
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহের মহেশপুরে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে মহান বিজয় দিবস পালিত মাগুরার হাজরাপুর ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পের কাজের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ  মহান বিজয় দিবসে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ মহান বিজয় দিবসে পতাকা হাতে ৫৪ বাংলাদেশি প্যারাট্রুপারের বিশ্বরেকর্ড মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন গোলাম আজম যদি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হয় তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানটা কোথায় : মির্জা আব্বাস নিরাপত্তার শঙ্কায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন নারায়ণগঞ্জের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদ বিজয় দিবস উপলক্ষে মোংলায় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ৩ যুদ্ধজাহাজ বিজয় দিবসের আগের রাতে শরীয়তপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত ইতিহাসের ৯০ শতাংশই কল্পকাহিনী : জামায়াত প্রার্থী আমির হামজা
এইমাত্রপাওয়াঃ

সাবমেরিনে করে ইউরোপে পাচার হচ্ছে কোকেন !

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে নানা বিচিত্র উপায়ে মাদক পাচার করে থাকে, এ নিয়ে নানা খবর অনেকেই পড়েছেন। কিন্তু এজন্য পাচারকারীরা নিজস্ব সাবমেরিন বানিয়ে হাজার হাজার মাইল সাগর পাড়ি দিচ্ছে, এমনটা খুব একটা শোনা যায় না।

ইউরোপে এমনই একটি কোকেন বহনকারী সাবমেরিন প্রথম ধরা পড়ে ২০১৯ সালে। বিবিসির সংবাদদাতা নিক বীক সেই সাবমেরিনের ভেতরে বাইরে দেখে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন এই প্রতিবেদনে।

আমি এখন সেই সাবমেরিনটার ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছি, যেটা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ইউরোপে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিল। সাবমেরিনটা ২০ মিটার বা ৬৫ ফুট লম্বা, বানানো হয়েছে ফাইবারগ্লাস দিয়ে। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য যে ব্যাপারটা তা হলো এটা হোমমেড অর্থাৎ চোরাচালানরা নিজেরাই এটি বানিয়েছে।

সাবমেরিনটার ওপরে উঠে আমি কোনমতে ম্যানহোলের মত ঢাকনাটা তুলে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরটা খুবই সংকীর্ণ, দম বন্ধ হয়ে আসে। আর যে প্রযুক্তিতে এটা বানানো হয়েছে তা একেবারেই আদিম। কিন্তু এরই ভেতরে বসে ৩ জন লোক ২৭টি দীর্ঘ দিন ও রাত কাটিয়েছে, পাড়ি দিয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর।

সাবমেরিনটার ভেতরের দিকে দেয়ালে ফাটল ধরেছে। সেখান দিয়ে রোদ ঢোকার চেষ্টা করছে। সামনে একটা স্টিয়ারিং হুইল, প্রাথমিক স্তরের দুই-চারটে ডায়াল, আর একটা মরচে পড়া চাবি যা এখনো ইগনিশন হোলে ঢোকানো।

দেখেই বোঝা যায়, এই সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন হবার জন্য আসা একজনের কেন এটাকে একটা ‘মৃত্যু ফাঁদ’ বলে মনে হয়েছিল।

এনার্জি বার, ক্যান ভর্তি মাছ আর টয়লেট বলতে প্লাস্টিক ব্যাগ : সাবমেরিনটার ইঞ্জিন বসানো হয়েছে পেছন দিকে। পুরো যাত্রার জন্য এতে ভরা হয়েছিল ২০ হাজার লিটার জ্বালানি। নিশ্চিতভাবেই এটা চলার সময় ভেতরে থাকা লোকদের প্রচণ্ড তাপ ও শব্দ সহ্য করতে হতো।

এর তিনজন ক্রুর মধ্যে ছিল ইকুয়েডরের দুইজন, যারা পরস্পরের সম্পর্কীয় ভাই। আরেকজন একজন সাবেক স্প্যানিশ মুষ্টিযোদ্ধা। তারা যাত্রা শুরু করে ব্রাজিলের দুর্গম নিরক্ষীয় বনাঞ্চলের ভেতর থেকে, তারপর আমাজন নদী ধরে এগুতে থাকে। খাবার হিসেবে তাদের সঙ্গে ছিল এনার্জি বার, ক্যান ভর্তি সার্ডিন মাছ।

টয়লেট বলতে ছিল প্লাস্টিক ব্যাগ। তবে তাদের সঙ্গে আসল মালপত্র বলতে ছিল প্রায় তিন টন কোকেন। যার মূল্য ১৫ কোটি ডলারেরও বেশি। গন্তব্য ছিল আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে, ইউরোপ। কিন্তু এই লাভজনক গোপন মিশন তারা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি। যাত্রা শুরু করেছিল তারা ২০১৯ সালের শেষ দিকে।

কিন্তু তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যার মধ্যে ছিল যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ এজেন্সিও (এনসিএ)। গ্যালিসিয়ার উপকুলের কাছে তাদের সাবমেরিনটিতে সমস্যা দেখা দেয়। সেখানেই তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সাবমেরিনে করে মাদক পাচার এখনো চলছে : আটক করা এই সাবমেরিনটিকে এখন স্পেনের পুলিশের একটি ‘ট্রফি’ হিসেবে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয়েছে। আভিলা শহরে স্প্যানিশ পুলিশ একাডেমীর কার পার্কে সাধারণ লোকের দেখার জন্য এটিকে স্থাপন করা হয়েছে।

কিন্তু কেউ যদি মনে করেন, এই সাবমেরিনটি একটি অতীত যুগের স্মৃতিচিহ্ন, তা মোটেও নয়। বরং এটি আসলে এক বাস্তবতারই প্রতীক। কারণ মাদক চোরাচালানরা এখনো এ কাজে সাবমেরিন ব্যবহার করছে এবং এ প্রবণতা ক্রমশই বাড়ছে। গত মাসেই স্পেনের উপকুলে সেই গ্যালিসিয়া অঞ্চলেই আরেকটি মাদকবাহী সাবমেরিন ধরা পড়েছে।

স্প্যানিশ ন্যাশনাল পুলিশের মাদক-দমন সংক্রান্ত ব্রিগেডের চিফ কমিশনার আন্তোনিও মার্তিনেজ দুয়ার্তে বলেন, ‘মাদক পাচারকারীরা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আফ্রিকা ও ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য গত ২০ বছর ধরে সাবমেরিন ব্যবহার করছে। কিন্তু এই মাত্র দুটি ক্ষেত্রেই আমরা তাদের ধরতে পেরেছি। এগুলোকে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন।’

মনে করা হয়, ইউরোপ লক্ষ্য করে এরকম শত শত সাবমেরিন ছাড়া হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পরে ইউরোপ হচ্ছে কোকেনের সবচেয়ে বড় বাজার এবং কোভিড মহামারির সময়কার মন্দা পার হয়ে এখন এই ব্যবসা হুহু করে বাড়ছে।

অনেকে বলেন, আটলান্টিক মহাসাগরের ঠিক মাঝ বরাবর ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ এবং অ্যাজোরেসের আশপাশে নাকি কোকেনবাহী সাবমেরিনের একটি গণ কবরখানা তৈরি হয়েছে। কারণ সাবমেরিন থেকে কোকেন খালাস করার পর এ জায়গাটিতে তাদেরকে ইচ্ছে করেই সাগরে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

কোথায় কীভাবে তৈরি হয় এই চোরাই সাবমেরিন এ রকম একটি সাবমেরিন যদি সফলভাবে কোথাও কোকেনের একটি চালান পৌঁছে দিতে পারে তাহলে চোরাচালানদের জন্য তো বটেই, তা ছাড়া যে কারিগররা এই সাবমেরিনটি বানিয়েছে তাদের জন্যও এটি এক বিরাট সাফল্য।

এগুলো তৈরি হয় অত্যন্ত গোপনে, দক্ষিণ আমেরিকার কোন গভীর জঙ্গলের ভেতরে কোন কারখানায়। অধিকাংশ কারখানাই গায়ানা বা সুরিনামে অবস্থিত। স্পেনের পুলিশের জন্য এসব সাবমেরিনের বিরুদ্ধে লড়াই হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ।

দুটি সাবমেরিন আটক করাকে তারা বড় বিজয় হিসেবেই তুলে ধরছেন। চিফ কমিশনার দুয়ার্তে বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। ইউরোপে এই প্রথমবারের মত আমরা দেড় টন কোকেন পেস্ট উদ্ধার করতে পেরেছি।’

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউরোপের মাটিতে কাঁচা কোকা পেস্ট থেকে কোকেন তৈরির যে ল্যাব তারা আবিষ্কার করেছেন সেটি এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড়। কিন্তু যে কোকেন তারা উদ্ধার করেছেন, তার তাৎপর্য শুধু এর বিরাট পরিমাণের মধ্যেই নিহিত নয়।

চিফ কমিশনার দুয়ার্তে বলেন, ‘এই অপারেশনে আরও নিশ্চিত হয়েছে যে কলম্বিয়া আর মেক্সিকোর অপরাধীরা এখন স্পেনে সক্রিয় স্প্যানিশ অপরাধী চক্রগুলোর সঙ্গে মিলে একযোগে কাজ করছে।’

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনের সময় ল্যাবে পাওয়া সামগ্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের স্বচক্ষে দেখানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনের কক্ষটি কাঁচা কোকার গন্ধে ভরে যায়, যে গন্ধ অনেকটা ভিনেগারের মত।

সেখানে আরও ছিল রাসায়নিক পদার্থের ব্যারেল, মাইক্রোওয়েভ, হাইড্রলিক প্রেস ও ওজন মাপার যন্ত্র এবং কোকা থেকে কোকেন তৈরির প্রক্রিয়াটিও দেখানো হয়। কক্ষটির আরেক কোণায় ছিল কয়েক ডজন বাদামি প্যাকেট।

একেকটার আকৃতি একটা ইটের সমান। তার ওপর সিল দেয়া সুপারম্যানের লোগো। চোরাচালানরা এই প্রতীকটি ব্যবহার করে সম্ভবত তারা নিজেদের ‘অপরাজেয়’ মনে করে বলেই।

একজন অফিসার আমাকে জানালেন, কোকেন আমদানিকারকরা এক একটি প্যাকেটের জন্য ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার ডলার দাম দেয়। তারপর তারা এগুলো রাস্তায় বিক্রি করে কমপক্ষে দ্বিগুণ দামে। গ্যালিসিয়া এলাকায় পন্টেভেডরা শহরে পুলিশ যে ল্যাবটি শনাক্ত করেছে, তারা প্রতিদিন ২০০ কিলো পরিমাণ ৯৫ শতাধিক বিশুদ্ধ কোকেন উৎপাদন করতে পারতো।

মাদক ব্যবসা বেড়েই চলেছে : সাবমেরিন ও ল্যাব থেকে মাদক চোরাচালানের জগতের ভেতরকার একটা চিত্র পাওয়া যায়। এটা এমন এক ব্যবসা যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের মাদক সংক্রান্ত এজেন্সি জানিয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কোকেন উৎপাদন এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে।

এটা এক নতুন রেকর্ড এবং ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছরের বৃদ্ধির পরিমাণের মধ্যে সবচেয়ে বড়। মাদকের সরবরাহ কী পরিমাণে বেড়েছে তা প্রত্যক্ষ করা যায় বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহরে গেলে। এখানে ২০২২ সালে পুলিশ ১১০ টন কোকেন বাজেয়াপ্ত করেছে। এতো বিপুল পরিমাণ কোকেন ধ্বংস করার মত যথেষ্টসংখ্যক ইনসিনারেটর বা চুল্লিও তাদের ছিল না।

ইউরোপে মাদক ব্যবসার কেন্দ্র বেলজিয়াম  : অনেকে অনুমান করেন, এই বন্দরে প্রকৃতপক্ষে যে পরিমাণ কোকেন আসছে তার মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে। বাকিটা চলে যায় নেদারল্যান্ডসে এবং সেখান থেকে যায় যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সর্বত্র।

অ্যান্টওয়ার্প বন্দরের কাস্টমসের প্রধান আমাকে জানিয়েছেন, একে বলা যায় কোকেনের সুনামি এবং এই যুদ্ধে তারা কখনো জয়ী হতে পারবেন না। এই মাদক ব্যবসার লড়াই এখন অ্যান্টওয়ার্পের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে।

জানুয়ারি মাসে কোকেন বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত গ্যাংগুলোর বন্দুকযুদ্ধে একটি ১১ বছরের মেয়ে নিহত হয়। বেলজিয়ামের বিচার মন্ত্রী ভিনসেন্ট ভ্যান কিকেনবর্ন গত এক বছর ধরে একটি সুরক্ষিত ভবনে বাস করছেন।

কারণ ডাচ অপরাধীরা তাদে অপহরণ করবে, এমন এক পরিকল্পনার কথা উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এসময় তার বাড়ির সামনে একটি গাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। বেলজিয়ামের একজন শীর্ষ তদন্তকারী মিশেল ক্লেইজ জানিয়েছেন, কোকেন শিল্প এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

ব্রাসেলসে জাস্টিস প্যালেসের কাছে আমার সঙ্গে দেখা হবার পর তিনি বলেন, ‘যাদেরকে আমরা মাদক পাচারকারী বলি, তারা এখন বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে। এসব গ্যাং বা অপরাধী চক্রের সম্পদ এবং প্রভাব, যারা এদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন, তাদের ছাড়িয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্থ পাচার ও দুর্নীতি এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ডক কর্মী, পুলিশ ও অন্য লোকদেরকে এখন অপরাধী চক্রগুলো যে পরিমাণ অর্থ অফার করতে পারে তাতে আপনি কী করে আশা করবেন যে আমরা এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো? খেলা শেষ হয়ে গেছে।’

এশিয়া আফ্রিকা: কোকেন ব্যবসার পরবর্তী লক্ষ্য? : বেলজিয়ামের কোকেন সংকট মানে হচ্ছে ইউরোপের কোকেন সংকট। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলো এখন এমনভাবে একসঙ্গে কাজ করছে যা আগে কখনো হয়নি। জাতিসংঘ আরও জানিয়েছে, ইউরোপ মহাদেশে তাদের সাফল্যের পর তারা শিগগীরই অসীম অর্থ আয়ের লক্ষ্যে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করবে এশিয়া ও আফ্রিকায়।

আজকের বাংলা তারিখ

December ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Nov    
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  


Our Like Page