অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ উপলক্ষে পহেলা মে ওয়াশিংটন সফরের কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সফরে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তাসহ পাঁচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৭৫ দশমিক ৩ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সহজ শর্তের এ ঋণ দেশের উন্নয়নকে আরও বেগবান করবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে এসব তথ্য জানা যায়। উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণগুলো বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে দেওয়া হবে। যা পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। প্রচলিত ঋণে সার্ভিস চার্জ মাত্র শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেট সহায়তাসহ বেশকিছু প্রকল্পে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি সই হবে প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ঋণচুক্তি ছাড়াও এ সফরে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ও বর্তমানে সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্সি টেম্বন মনে করেন, বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে উন্নয়ন ঘটাতে হয়, এমনকি প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলোর জন্যও কীভাবে সেবা নিশ্চিত করতে হয়। ৫০ বছরের এ সম্পর্ক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বব্যাংকের কাছে। এদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিশ্বব্যাংক পাশে থেকেছে, থাকবেও।
মিলবে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা : বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা ৫০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। তবে এখনই এ বাজেট সহায়তা অনুমোদন করবে না সংস্থাটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে এ অর্থ অনুমোদন হতে পারে।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মো. আব্দুর রউফ তালুকদার।
ওই সময় তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মিটিংয়ে আমাদের ৫০০ মিলিয়ন বাজেট সাপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসার পর হয়তো এ অর্থটা অনুমোদন হবে এবং ঘোষণা আসবে।
গভর্নর বলেন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কাছে আমাদের ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট আটকে আছে। কারণ এর কয়েকটি শর্ত আমরা পূরণ করতে পারিনি। ৫০০ মিলিয়ন ডলারের এ বাজেট সাপোর্টের সব শর্ত আমরা পূরণ করেছি। এখন শুধু অর্থছাড় হওয়ার অপেক্ষা।
খাদ্যশস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে মিলবে ৫০ কোটি ডলার : কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রিনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। এরই মধ্যে প্রকল্পের ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থাকে রূপান্তর ঘটিয়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তন করা, খাদ্যশস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা, কৃষিপণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়ন এবং জলবায়ুসহিষ্ণু এগ্রিফুড ভ্যালু-চেইনের সম্প্রসারণ।
জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে দেশের আটটি বিভাগ, ১৪টি কৃষি অঞ্চল, ৬৪টি জেলাসহ ৪৯৫টি উপজেলার সব ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী, কৃষক স্মার্টকার্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিজিটাল কৃষি সেবা নিশ্চিত করবে। সেচ অবকাঠামো, আবাসিক, অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, মোবাইল ক্রপ ক্লিনিক ও কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক সেমিনার-ওয়ার্কশপ আয়োজন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন।
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমদানি–রপ্তানি বাড়াতে মিলবে ৭৫ দশমিক ৩ কোটি ডলার : পণ্য পরিবহন ও যাত্রীদের সুবিধার্থে দেশের তিন স্থলবন্দরের অবকাঠামোর উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। স্থলবন্দরগুলো হলো- যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী। ‘অ্যাকসিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’ প্রকল্পের আওতায় এ উন্নয়নকাজ করা হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭৫ দশমিক ৩ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বেনাপোল, বুড়িমারী ও ভোমরা স্থলবন্দরের সামগ্রিক সক্ষমতা বাড়বে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করবে।
বন্যাঝুঁকি কমাতে দেবে ৫০ কোটি ডলার : বন্যাঝুঁকি কমাতে ‘রেজিলেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ফর অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি রিডাকশন প্রকল্পের আওতায় ৫০ কোটি ডলার অনুদান দেবে বিশ্বব্যাংক। জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে ১৪টি জেলার ৭৮টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। নদীতীরবাসী ও আকস্মিক বন্যাকবলিত এলাকার জনগোষ্ঠীর বন্যার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানে সক্ষমতা বাড়ানো প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ২৫ কোটি ডলার : ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’ প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাংলাদেশকে পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহায়তা করবে। প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূষণ সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে। বৃহত্তর ঢাকা ও এর বাইরে বসবাসকারী দুই কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হবে প্রকল্পের মাধ্যমে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন বন্ধু। অনেক বড় বিষয় সামনে আছে, কিছু প্রকল্পের আওতায় ঋণচুক্তি হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন বিশ্বব্যাংকে যাচ্ছেন নিশ্চয় ভালো কিছু আমরা আশা করছি, যার সুফল দেশবাসী পাবে। বিশ্বব্যাংকের ঋণে আমরা নানা ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’
Leave a Reply