অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে ১১ দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এতদিন যে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ছাড় পেয়ে আসছিল তার মেয়াদ আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে তখন ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে।
২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ফলে এতদিন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে ওই সময় থেকে তা আর পাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তির লক্ষে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য আমরা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে চাই। বর্তমানে ১১ দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
কিছু উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমিত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। তবে কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই। শেখ হাসিনা তার সাক্ষাৎকারে নতুন অংশীদারদের নাম উল্লেখ করেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন ও জাপান রয়েছে।
চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। পোশাকখাতের বাইরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতিকে প্রতিশ্রুতিশীলখাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি মৎস্য সম্পদসহ বঙ্গোপসাগরের সম্পদের কথাও তুলে ধরেছেন সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, বঙ্গোসাগরকে ব্যবহার করে কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায় তা নিয়েও আমরা ভাবছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কীভাবে দেশকে উন্নত করতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি বিশ্বাস করি আমাদের উন্নয়নের জন্য সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাপান সহযোগীর ভূমিকা রেখে আসছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার মেয়াদকালে ৪৪০ কোটি ডলার বা ৬০০ বিলিয়ন ইয়েন (জাপানি মুদ্রা) সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তী সাত বছরে জাপানি সহায়তা ঋণ বেড়ে ১ দশমিক ৬৫ ট্রিলিয়ন ইয়েনে দাঁড়িয়েছে।
জাপানি সহায়তায় বাংলাদেশ ২০২২ সালের শেষ নাগাদ প্রথম মেট্ররেল ও শিল্প পার্ক চালু করে। তাছাড়া শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল জাপানের কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরও তৈরি করা হচ্ছে জাপানের সহায়তায়।
সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাপান বাংলাদেশের প্রতি অত্যন্ত সহযোগিতামূলক ও সহায়ক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্স। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জিডিপি ছয় থেকে সাত শতাংশের মধ্যে থাকছে। এমনকি করোনা মহামারিতেও এই হার ইতিবাচক ছিল।
বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ও ঋণ বেড়েছে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সতর্ক রয়েছে। তাই মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে চীনা সহায়তা না নিয়ে জাপানি সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply