অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে তার শান্তিনিকেতনের বাড়ি থেকে উচ্ছেদে দেওয়া নোটিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ লক্ষ্যে রাজ্যের মন্ত্রীদের অমর্ত্য সেনের বাসভবনের বাইরে অবস্থান নিতেও বলেছেন তিনি।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বুধবার (৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর উচ্ছেদের নোটিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাজ্যের মন্ত্রীদের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের বাসভবনের বাইরে অবস্থান শুরু করতে বলেছেন বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালীন মমতা ব্যানার্জি স্থানীয় বিধায়ক এমএসএমই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিতে বলেন। এছাড়া অমর্ত্য সেনের বাসভবনের বাইরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও যোগ দেবেন।
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমি দখলে নিতে বুলডোজার পাঠালেও ঘটনাস্থল থেকে সরে না যেতে মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মমতা তার মন্ত্রীদের বলেন, বীরভূম জেলার বাউল ও অন্যান্য লোকশিল্পীদের অবশ্যই বিক্ষোভে যুক্ত থাকতে হবে এবং প্রতিবোদের সময় সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় গায়ক কবির সুমন এবং চিত্রশিল্পী শুভপ্রসন্নও আগামী ৬ ও ৭ মে ওই প্রতিবাদে যোগ দেবেন বলে মমতার বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্বভারতী অমর্ত্য সেনের বাসভবনের দখল নিতে বুলডোজার পাঠালেও মুখ্যমন্ত্রী তাদের (মন্ত্রীদের) এক ইঞ্চিও নড়াচড়া না করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
অবশ্য মমতা ব্যানার্জি গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি এই ইস্যুতে শান্তিনিকেতনে অবস্থান শুরু করবেন।
এর আগে বিশ্বভারতী গত ১৯ এপ্রিল অমর্ত্য সেনকে তার বাসভবন থেকে উচ্ছেদের একটি নোটিশ পাঠায়। ওই নোটিশে তাকে আগামী ৬ মের মধ্যে তার বাসভবনের ১.৩৮ একর জমির মধ্যে ১৩.১৩ শতাংশ খালি করতে বলা হয়।
১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্থাপিত বিশ্বভারতী পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর।
তবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এর আগে জোর দিয়ে বলেছিলেন, শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাসে তার যে জমি রয়েছে সেটির বেশিরভাগই তার বাবা কিনেছিলেন এবং আরও কিছু প্লট ইজারা নিয়েছিলেন।
অবশ্য অমর্ত্য সেনের এই জমি নিয়ে বিতর্ক বেশ পুরোনো। কিছু দিন আগে অর্থনীতিবিদ যখন শান্তিনিকেতনে ছিলেন, সে সময়ই তাকে একটি চিঠি দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, শিগগিরই ১৩ ডেসিমেল জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দিতে হবে। ওই নোটিশ ঘিরে সেসময ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়।
চিঠির জবাবে অমর্ত্য সেন পাল্টা দাবি করেন, ওই বাড়ির জমির একাংশ বিশ্বভারতীর কাছ থেকে লিজ নেওয়া, বাকি অংশ কেনা। এখন মিথ্যা কথা বলছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এই পরিস্থিতিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন চলতি বছরের জানুয়ারিতে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেসময় প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদের হাতে জমির কাগজপত্র তুলে দেন তিনি।
এরপর বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে সমালোচনা করে মমতা বলেছিলেন, ‘এভাবে মানুষকে অপমান করা যায় না।’
একইসঙ্গে এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি।
Leave a Reply