অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজশাহীর বরেন্দ্র মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন বাগমারা উপজেলার উম্মে হাবিবা। কিছুদিন আগে নিজ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে অনলাইনে ভোটার হওয়ার ফরমপূরণ করেন। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি।
পরে ভুক্তভোগী হাবিবা নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার নামের তথ্যের বিপরীতে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ বা পাগল উল্লেখ থাকায় তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন না। কিছুদিন আগে স্থানীয় নির্বাচন অফিস তাকে ডেকে নিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছেন। তাতে লেখা ছিল যে, তিনি পাগল নন।
উম্মে হাবিবা বলেন, স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গিয়ে অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন ফরমপূরণ করেছিলাম। কীভাবে ভুল হল জানি না। এই জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছি না। তবে তারা একটি প্রত্যয়নপত্র নিয়েছে।
ভুক্তভোগী উম্মে হাবিবার বাবা কাচারি কোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, তার মেয়ে একটি মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন সম্পন্ন করেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। অথচ তার মেয়েকে দেখানো হচ্ছে অপ্রকৃতিস্থতা বা পাগল।
একই অবস্থা ভবানীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলামেরও। তিনি বলেন, আমি ভোটার আইডি না পেয়ে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করি। এ অবস্থা জেনে তাদের পরামর্শে তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি। দ্রুত বিষয়টির সমাধান চাই।
জানা গেছে, উম্মে হাবিবা ও আমিনুলের মতো রাজশাহীতে ১২৫ নতুন ভোটার তরুণ-তরুণী এই বিড়ম্বনায় পড়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে এসব নতুন ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্যে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ বা পাগল উল্লেখ রয়েছে।
এ সংখ্যা জেলার বাঘা উপজেলায় পাঁচজন, বাগমারায় ১৭ জন, তানোরে ১১ জন, পবায় ৩০ জন, চারঘাটে নয়জন, পুঠিয়ায় আটজন, মোহনপুরে ছয়জন, দুর্গাপুরে সাতজন ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০ জন।
এ ছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার শাহ মখদুম থানায় একজন, মতিহারে একজন, বোয়ালিয়ায় পাঁচজন এবং রাজপাড়ায় পাঁচজন রয়েছেন। জেলা নির্বাচন অফিস এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে আবেদনকারীর বিভিন্ন ধরনের তথ্য চাওয়া হয়। ‘অন্যান্য তথ্য’ অংশে ‘অসমর্থতা’ শিরোনামে একটি ছক রয়েছে। এই ছকে মূলত দৃষ্টি, শারীরিক, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও অপ্রকৃতিস্থতা বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। অনেকে না বুঝে সেখানে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ নির্বাচন করেন। ফলে ডেটাবেজে তাদের তথ্যে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী আদালত স্বীকৃত কোনো অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ভোটার হতে পারবেন না। এর বাইরে সবাই ভোটার হতে পারবেন। পাগলদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। তবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে কোনো বাধা নেই। কোনো সুবিধা বা সেবা গ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র যখন যাচাই করা হবে, তখন তথ্যভাণ্ডারে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ দেখাবে। সেক্ষেত্রে তিনি সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তিনি বলেন, শুধু রাজশাহীতেই নয়, সারাদেশে অন্তত ১০ হাজারেও বেশি অপ্রকৃতিস্থ বা পাগলের তথ্য ভোটার পাওয়ার আবেদনে পাওয়া গেছে। এগুলো নিয়ে আমার কাজ করছি। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ডেকে নিয়ে এসে আবার সংশোধনের জন্য ঢাকায় পাঠাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত এগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
Leave a Reply