অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সভ্যতার অগ্রযাত্রায় প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের জন্য বিশেষজ্ঞ উপস্থিতি অপরিহার্য। আদিকালের পিরামিড হোক বা হালের মিক্রোচিপ, মানুষের জন্য পৃথিবী পৃষ্ঠের যাত্রা সহজ করতে সক্ষম হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারগণ এবং তাঁর উদ্ভাবনী শক্তি।
বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার রোডম্যাপ ৬০তম আইইবি কনভোকেশনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছে আইবি কর্তৃপক্ষ। বড় মেগা প্রজেক্টগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের প্রকৌশলীদের সক্ষমতা ও সাফল্যের গল্প উঠে আসছে।
পেশাজীবী প্রকৌশলীদের জাতীয় সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ বা আইইবি। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রকৌশলীদের শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, বিশ্বের নিত্য নতুন আধুনিক প্রযুক্তির সাথে প্রকৌশলীদের পরিচয় করে দেয়া, বিদেশী প্রযুক্তিকে দেশোপযোগী করে প্রয়োগ, বিভিন্ন কারিগরি ইস্যু, উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারকে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সহযোগিতা প্রকৌশলীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ সাধনে আইইবি ৭৫ বছর ধরে নিরলস কাজ করছে।
১৯৪৮ সালের ৭ই মে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ঢাকাতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন স্থাপন এবং এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, পাকিস্তান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ নামে যাত্রা শুরু করে। আইইবি’র বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪১,৫৪৫ জন। ১৯৭২ সাল থেকে সংস্থাটি ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত হয়।
অবকাঠামোখাতে জাতিসংঘের সূচকে বাংলাদেশ ১২ধাপ এগিয়ে এখন ৮৮তম। যা গত একযুগে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতির ফসল। ২০১২ সালে মিথ্যা আন্তর্জাতিক প্রপাগান্ডায় যখন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণ বিনিয়োগ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়, তখন আন্তর্জাতিক সব সংস্থার সাথে ডিজাইন, কনসালটেশন বা নির্মানযজ্ঞ সবই করছেন বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়াররা। এছাড়া মেগা প্রজেক্ট মেট্রোরেলেও বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়াররা বড় ভূমিকা রেখেছে। মাতারবাড়ি হোক বা এয়ারপোর্টের এক্সটেনশন,এমনকি বঙ্গবন্ধু টানেল বা একের পর এক নান্দনিক মডেল মসজিদ।
আইইবির ৫টি প্রকৌশল বিভাগীয় কমিটি রয়েছে পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎকৌশল, রসায়নকৌশল এবং কৃষিকৌশল। এছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে এর ১৬টি কেন্দ্র ও ৩৩টি উপকেন্দ্র রয়েছে। বিশ্বের ৭টি দেশ কাতার, AIT ব্যাংকক, কুয়েত, রিয়াদ, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, UAE-তে এর বৈদেশিক চ্যাপ্টার রয়েছে।
আইইবির চারটি স্বতন্ত্র বোর্ড রয়েছে। এগুলো হলো ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ (ইএসসিবি), বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার্স রেজিস্ট্রেশন বোর্ড (বিপিইআরবি), বোর্ড অব এক্রিডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকিনক্যাল এডুকেশন (বিএইটিই) এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি বোর্ড অব বাংলাদেশ (আইএসবিবি)।
প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রকৌশল প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে এবং গবেষণা, সেমিনার ও বাৎসরিক কনভেনশনের আয়োজন করে। এটি নিয়মিতভাবে পেশাগত জার্নাল এবং সাময়িকী ও ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ প্রকাশও করে থাকে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন জাতীয় সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব করে। এ ছাড়া এটি ৫টি আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সংগঠন তথা কমনওয়েলথ ইঞ্জিনিয়ার্স কাউন্সিল (সিইসি), ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন্স (ডব্লিউএফইও), ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটশন্স অব সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া (ফিয়েস্কা), ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (এফইআইআইসি) এবং ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনস অব এশিয়া প্যাসেফিক (এফইআইএপি)-এর সদস্য।
Leave a Reply