অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মোখায় লন্ডভন্ড মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনে জাতিসংঘের ও বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধি দলকে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ।
শুক্রবার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারে বর্তমানে জাতিসংঘসহ কয়েকটি বিদেশি দাতব্য সংস্থার প্রতিনিধিরা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বসে আছেন। ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার তাদেরকে রাখাইনে গিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর অনুমতি এখনও দেয়নি, কবে দিতে পারে কিংবা আদৌ দেবে কিনা— এটাও অনিশ্চিত।’
‘প্রতিনিধিদের যদি রাখাইনে যেতে দিতে জান্তার আপত্তি থাকে, সেক্ষেত্রে তারা এসব ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে বিতরণ করতে পারে। সেটিও তারা করছে না।’
টম অ্যান্ড্রুজ জানান, ত্রাণ বিতরণের জন্য জান্তা প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়মিত যোগাযোগ-আলোচনা চলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো ফলাফল আসেনি।
গত রোববার (১৩ মে) প্রবল শক্তি নিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের উপকূলে আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় মোখা। এসময় রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া রেকর্ড। ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিতওয়েসহ বিভিন্ন অঞ্চল।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা বিতরণকারী সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) বলেছে, ঘূর্ণিঝড় মোখায় পুরো রাখাইন তছনছ হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রদেশের কায়াউকতু, মংডু, পাকতু, পোন্নাগিউন, রাথেডাউং এবং রাজধানী সিতওয়ে শহর।
মোখাকে বিবেচনা করা হচ্ছে এযাবৎকালে মিয়ানমারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে। রোববার ঝড়ের পর সোমবার এক বিবৃতিতে ৩ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছিল জান্তা। পরে শুক্রবার আরেক বিবৃতি দিয়ে সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঝড়ে রাখাইনে ১৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
তবে রাখাইন প্রদেশের কয়েকজন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা সরে যাওয়ার পর রাখাইনের বিভিন্ন গ্রাম ও শহর থেকে ৪ শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং এখনও নিখোঁজ আছেন বহু মানুষ।
এদিকে, ঝড়ে বাড়িঘর তছনছ এবং রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন রাখাইনের গ্রাম ও শহরাঞ্চলের লোকজন। অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার, সুপেয় পানি ও ওষুধের সংকট।
চিকিৎসা ও ওষুধ সহায়তা প্রদানকারী দাতব্য সংস্থা মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ) মিয়ানমার শাখার ব্যবস্থাপক পল ব্রোকম্যান সিএনএনকে বলেন, আমাদের কাছে খুব বেশি না হলেও মোটামুটি পরিমাণে ওষুধ ও জীবাণুনাশকের মজুত আছে। রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় এসব ওষুধ বিতরণ করতে অন্তত এক মাস ঘুরতে হবে। কিন্তু জান্তা আমাদের সিতওয়ে থেকে বের হওয়ারই অনুমতি দিচ্ছে না।
এজাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহয়তা বিতরণকারী সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, রাখাইনের উপদ্রুত এলাকাগুলোর জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ ও তা বিতরণ করতে অন্তত ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি তহবিল প্রয়োজন তাদের। কিন্তু ওসিএএইচএর তহবিলে বর্তমানে আছে এই অর্থের মাত্র ১০ শতাংশ।
ওসিএইচএর এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ‘রাখাইনে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে আমাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা ২টি— জান্তার বাধা ও তহবিলের স্বল্পতা। প্রথম প্রতিবন্ধকতাটি হয়তো আলোচনার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হবে। কিন্তু দাতারা যদি এগিয়ে না আসেন, সেক্ষেত্রে রাখাইনে ত্রাণ তৎপরতা চালানো আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে।
Leave a Reply