অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : একজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। জনগণ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চায়, নাকি ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই জরুরি অবস্থা, আবার সেই ধরপাকড় সেগুলো চায়, এটা দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।
বুধবার (২১ জুন) বেলা সোয়া ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পরে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যেহেতু ওয়েস্টমিনস্টার টাইপের গণতন্ত্র তাই ইংল্যান্ডসহ ওইসব জায়গায় যেভাবে নির্বাচন হয় ঠিক সেভাবে আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সময় নিয়ে আমাদের বিরোধী দল থেকে নানা প্রস্তাব। তারা এখন আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এটা সম্পর্কে খালেদা জিয়ার উক্তি ছিল পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নাই।
তিনি বলেন, একবার যেটা তারাই বাদ দিয়েছে, এ পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, তারা রাখেনি। সেটাকে তারা আবার ফেরত চাচ্ছে। অথচ উচ্চ আদালতের রায় আছে, সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে। একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকার প্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান ক্ষমতা না নেবেন, সেটা পরিবর্তন হবে না। একজন নির্বাচিতের জায়গায় আরেকজন নির্বাচিতকেই আসতে হবে। এটা সবাই জানে। জানার পরেও কেন সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যটা কি? তার মানে এ দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। দেশ যে দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠুভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা।
এটা দেশবাসী কীভাবে নেবে– সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তারা কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান, অর্থনৈতিক উন্নতি চান, দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান। নাকি ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই জরুরি অবস্থা, আবার সেই ধরপাকড় সেগুলো চায়। এটা দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে। এ সময় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামায়াতের ‘অগ্নিসন্ত্রাসের’ কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে! নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আমার হাতে এই দেশের কোনও সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় আসতে পারতাম। আর এখন যদি বলি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কারও কাছে লিজ দেবো তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনও অসুবিধা নাই। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনও দেশ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, কাউকে আক্রমণ করবে, এই ধরনের কাজ আমরা হতে দেবো না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে যে ১১ লাখ শরণার্থী এসেছে তারপরও তাদের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। এরা যাতে ফেরত যায় তার চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুরোধ করছি। আমরা কিন্তু ঝগড়া বা যুদ্ধ করিনি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, এ নীতিতে বিশ্বাস করি। তা মেনে চলবো।
তিনি বলেন, আজ যে বিএনপিসহ কিছু দল মাঠে নেমেছে তাদের অসুবিধা কোথায়? সমস্যাটা কী? মানুষ দুই বেলা পেটভরে ভাত খাচ্ছে। এত মুদ্রাস্ফীতির পরেও মানুষের খাবারের অভাব হচ্ছে না। হ্যাঁ একটু চাপে আছে মানুষ, সেই কষ্টটা আমি বুঝি। তাই আমাদের প্রচেষ্টা আছে। মানুষের দুঃখ, কষ্টটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। তাই যতটা সহজ করার দরকার সেটা করে যাচ্ছে। আগে তো মানুষ খেতে পারতো না।
শেখ হাসিনা বলেন, আগে যেখানে মাটি দিয়ে হেঁটে যেতে হতো স্যান্ডেল জোড়া বগলদাবা করে, এখন সেখানে হয় ভ্যানে যাচ্ছে, না হয় স্যান্ডেল পরে। মানুষের তো একজোড়া স্যান্ডেল ছিল না। এখন তো পাচ্ছে। কার জন্য পাচ্ছে? আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই সম্ভব। সাড়ে ১৪ বছর আমরা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, অপপ্রচার মোকাবিলা করেই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সেটাই মানুষ চাইবে? নাকি আবার সেই সন্ত্রাস যুগে প্রবেশ করবে, ভোট চুরি, ভোট ডাকাতির যুগে প্রবেশ করবে। সেটা জনগণের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। তারা কী করুক, কী করবে।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকেরই আগ্রহ থাকবে এতে তো কোনও সন্দেহ নাই। কাকে প্রার্থী করা হবে কাকে হবে না এ ব্যাপারে আমাদের দলেরও একটা লক্ষ্য থাকে। একটা অবাধ নিরপেক্ষ স্বচ্ছ নির্বাচন হবে, এটা আমাদেরও দাবি। অনেকেই তো প্রার্থী হতে পারে। প্রার্থী যদি হয়, শত ফুল ফুটতে দিন। যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর সেটি আমি বেছে নেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা নির্বাচন যখন হয় তখন আমরা প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা, প্রার্থীর সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা এসব বিবেচনা করি। সেখানে যদি আমরা নারীদের পাই তাদের দেই। তখন একটা বিষয় এসে যায়, কে জয়ী হয়ে আসতে পারবে। আমাদের তো ওয়েস্টমিনস্টার টাইপের গণতন্ত্র। এখানে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠরা সরকার গঠন করে। হিসাবটা ওখানে চলে যায়। আমাদের মেয়েরা যদি বেশি কাজ করে, কোনও এলাকায় যদি দেখি তারা ভালো, তখন তাদের প্রার্থী করি।
Leave a Reply