24 Nov 2024, 10:47 pm

ঝিনাইদহের ফজিলা ফিরলেন ২১ বছর পর

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম কবীর, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের ফজিলা নেছা যখন নিখোঁজ হন তখন তার বয়স ৩০ বছর। দুই মেয়ে ফিরোজা ও পিঞ্জিরা তখন শিশু। এই অবস্থায় স্বামী হোসেন আলী মারা গেলে ফজিলা দিশেহারা হয়ে পড়েন। সংসার নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বড়তে থাকে ফজিলার। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া ফজিলা এক পর্যায়ে মেয়েদের এতিমখানায় রেখে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। কিন্তু এ ভাবে তিনি সময় পার করতে পারেননি। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ফজিলা নিখোঁজ হয়ে যান।  মেয়েরা এতিমখানায় থাকতে খবর পান মা হারিয়ে গেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা। এরপর কেটে যায় ২১ বছর।

ফজিলা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষখালী গ্রামের খয়বার আলী শেখ ও মোমেনা খাতুনের মেয়ে। ২১ বছর পর সেই নিখোঁজ ফজিলা শনিবার দুপুরে নিজ গ্রামে ফেরেন। গত শুক্রবার আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে তাকে বাংলাদেশে পৌছে দেয়া হয়। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় ফজিলার সন্ধান পান তাঁর স্বজনেরা। আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের শূন্যরেখায় নিখোঁজ ফজিলা খাতুনকে মেয়ে পিঞ্জিরার হাতে তুলে দেন। ২১ বছর পর মাকে কাছে পেয়ে আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সঙ্গে ছিলেন পিঞ্জিরার স্বামী আবদুল হালিম শেখ ও মামাতো ভাই জালাল উদ্দিন।

পিঞ্জিরা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন তার মা ২১ বছর আগে বিষয়খালীর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। ঘটনাচক্রে কোনোভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছে যান তিনি। দুই মেয়েসহ স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর সন্ধান পাননি। এভাবে কেটে যায় বহু বছর। অবশেষে আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন ফজিলার সন্ধান পেয়ে পরিবারকে খবর দেন। পিঞ্জিরা জানান, দুই-তিন বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। তখন তাঁদের নিয়ে মা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতেন। একপর্যায়ে তাঁদের ঝিনাইদহের এতিমখানায় রেখে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। একপর্যায়ে মা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। একদিন এতিমখানায় থাকতে খবর পান, তাঁর মা হারিয়ে গেছেন। তখন তাঁর বয়স ১২ বছর। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ২০২২ সালের আগস্টে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শাহীনের মাধ্যমে জানতে পারেন, তাঁদের মা জীবিত আছেন এবং ভারতে আছেন। ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর এক মাকে তাঁর সন্তানের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরে তাঁরা আনন্দিত। মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়ায় ২১ বছর আগে ঝিনাইদহ থেকে তিনি হারিয়ে যান। ত্রিপুরায় তাঁকে পাওয়া যায়। ত্রিপুরার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে তিনি বেশ কয়েক বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর ত্রিপুরার রাজ্য সরকার বিষয়টি তাঁদের জানায়। কিন্তু তাঁর দেয়া তথ্য অসম্পূর্ণ থাকায় তারা তাঁর পরিবারের সন্ধান পাচ্ছিলেন না। তিনি শুধু গ্রামের নাম বিষয়খালীর পরিবর্তে বিষখালী বলছিলেন। প্রথমে কুষ্টিয়ার বিষখালীতে খোঁজ করা হয়, কিন্তু সেখানে খোঁজ করেও তাঁর পরিবারের তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে ঝিনাইদহের বিষয়খালী গ্রামে খোঁজ নিয়ে তাঁর পরিবারে সন্ধান পাওয়া যায়। অবশেষে তাঁকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম মিয়া বলেন, ২০০২ সালে বিষয়খালী পুর্বপাড়ার ফজিলা খাতুন নেছা ওরফে ফজি নিখোঁজ হন। দীর্ঘদিন পর তিনি বাড়ি ফিরে আসায় পরিবার এমনকি গ্রামের মানুষ সবাই খুশি। তিনি বলেন, ফজির নামে একটি ব্যাংক ঋণ আছে। এটি পরিশোধ করা হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14294
  • Total Visits: 1296844
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:৪৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018