অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বিভিন্ন পাহাড়ে নজরকাড়া প্রাকৃতিক ঝরনা আছে। আটস্তর বিশিষ্ট খৈইয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, সহস্রধারা, সোনাইছড়ি, বোয়ালিয়া, মহামায়া, বাওয়াছড়া, রূপসী ঝরনা, হরিণাকুন্ড ঝরনা নজর কেড়েছে ভ্রমণ পিপাসুদের। এসব ঝরনা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ছুটে আসছেন কয়েকশ পর্যটক। তবে নয়নাভিরাম এমন সৌন্দর্যের মাঝে লুকিয়ে আছে মারণফাঁদও। ফলে ভ্রমণে এসে লাশ হয়ে ফেরার খবরও পাওয়া যাচ্ছে মাঝে মধ্যে। আনন্দ তখন পরিণত হচ্ছে বিষাদে।
মূলত পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনায় অসতর্কতার কারণে ঝরে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। সন্তান হারা হচ্ছেন মা-বাবা। নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। শুধুমাত্র সতর্ক হলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গত ৬ বছরে পাহাড়ি ঝরনায় মারা গেছে ১৬ জন পর্যটক। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক।
সর্বশেষ ২ জুলাই উপজেলার বড়কমলদহ রূপসী ঝরনার কূপে পানিতে ডুবে নিহত হয়েছেন দুই বন্ধু চট্টগ্রাম শহরের আকবরশাহ থানার ফিরোজশাহ কলোনীর মোহাম্মদ জামিলের ছেলে নুরুল আবছার ও মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আরিফ।
তাই পাহাড়ি ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। প্রতিটি ঝরনার মুখে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামরা। সম্প্রতি বনবিভাগ, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ইজারাদার, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সভা করেছে উপজেলা প্রশাসন। নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, পর্যটন স্পটগুলোকে পর্যটকবান্ধব করতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাইড ছাড়া পর্যটক যেন ঝরনায় যেতে না পারে তা নিশ্চিত করা, সিসি ক্যামরা স্থাপন পর্যটন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন, ইজারা নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়েও জেলা মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে।
পাহাড়ি ঝরনায় যেতে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা :
সঙ্গে গাইড নেওয়া : ঝরনায় যাওয়ার সময় সঙ্গে স্থানীয় অভিজ্ঞ গাইড নিতে হবে। ঝরনার প্রবেশপথে টিকিট কাউন্টারে ইজারাদার ও বন বিভাগ অনুমোদিত গাইড পাওয়া যাবে। খরচ হবে ৪০০-৫০০ টাকা। তারাই পাহাড়ি পথে দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে সহায়তা করবেন। এছাড়া ঝরনায় নিরাপদে থাকতে পরামর্শ দেবেন।
ছবি তোলায় সতর্কতা : ঝরনার খাড়া ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলার প্রবণতা আছে অনেকের। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে পা পিছলে ঘটে দুর্ঘটনা। তাই ছবি তোলায়ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নামা যাবে না গভীর কূপে : মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলোতে এক বা একাধিক কূপ আছে। এসব কূপ কলসি আকৃতির। ওপরে ছোট মুখ আর ভেতরটা বড় ও গভীর। এসব কূপে কোনোভাবেই নামা যাবে না।
সাইনবোর্ড টাঙানো স্থানে না যাওয়া : ঝরনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না যেতে বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে বনবিভাগ ও ইজারাদার। সেসব সাইনবোর্ড এড়িয়ে চলতে হবে পর্যটকদের।
সাঁতার না জানলে : ঝরনার নিচের অগভীর কূপগুলো অনেকটাই নিরাপদ। ঝরনার পানিতে ভিজে আনন্দ করেন পর্যটকরা। তবে বিপদ এড়াতে সাঁতার না জানলে এসব অগভীর কূপেও নামা যাবে না।
ঢাল বেয়ে ওপরে না ওঠা : পাহাড়ি ঝরনার ঢালগুলো পিচ্ছিল হয়ে থাকে। পর্যটকেরা এসব ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন। সামান্য ভুলে পা পিছলে পড়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই ঝরনারগুলোর খাড়া ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠা যাবে না।
ভারি বৃষ্টির সময় না যাওয়া : মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ঝরনায় যাওয়ার পথ উঁচু-নিচু। ভারি বৃষ্টির সময় এসব পথ খুব পিচ্ছিল থাকে। আর ভারী বর্ষণের সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে তীব্র স্রোত তৈরি হয়। এ সময় ঝরনায় ভ্রমণ খুব বিপজ্জনক।
নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেওয়া : স্বাভাবিক আবহাওয়ায় ঝরনা এলাকায় যাওয়ার পর অনেক সময় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এমন অবস্থায় পর্যটকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে তীব্র স্রোতের মধ্যে একপাশ থেকে অন্যপাশে পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এমন অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ উঁচু স্থানে অবস্থান নিতে হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চাওয়া যাবে।
Leave a Reply