এম এ কবীর : ঝিনাইদহ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুর রশীদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুর রশীদ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২.৩০ টার দিকে ঢাকায় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
বৃহস্পতিবার বাদ আসর ঝিনাইদহ উজির আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ঈদগাহ ময়দানে প্রথমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানোর পর মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার নিজ গ্রাম বেড়বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি আব্দুল হাই, এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার, জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আজিম-উল- আহসান, ঝিনাইদহ পৌর সভার মেয়র কাইয়ূম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড.আজিজুর রহমান, বীর মুক্তি যোদ্ধা মকবুল হোসেন এবং মরহুমের একমাত্র পুত্র ড.সাইফুল ইসলাম পিপলু প্রমুখ।
জানাজা নামাজে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কমচারী,রাজনৈতিক দলের নেতৃন্দ এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি গত ২২ আগস্ট থেকে বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী,এক ছেলে এবং তিন কন্যা সহ অসংখ্য ভক্ত, অনুসারী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। তিনি ১৯৪৯ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম আহম্মদ আলী বিশ্বাস। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে তিনি। ছিলেন বেড়বাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ডেফল বাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বাড়ি বাথান মাদ্রাসায়ও শিক্ষকতা করেন। মাঝখানে বেশ কিছু দিন তিনি ব্যবসা বাণিজ্য করতেও মনোযোগী হন। পরবর্তিতে তিনি ঝিনাইদহ আদালতে আইন পেশায় আত্মনিয়াগ করেন। মরহুমের একমাত্র পুত্র ড.সাইফুল ইসলাম পিপুল অষ্ট্রেলিয়ায় ক্যান্সার বিষয়ে গবেষণারত। তিনি জানান,তার পিতা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতের রানাঘাটে ইয়ূথ ক্যাম্পে ট্রেনিং করেন। সেখানে তিনি ট্রেনিংরত মুক্তিযোদ্ধাদের কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে দলের সংকটময় মুহুর্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, পরবর্তিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি মহকুমা যুবলীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯১ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ এবং ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ হিসেবে এবং ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কৃষকলীগের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ছিলেন।
তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মরমী কবি পাগলাকানাই স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ঝিনাইদহের সাবেক পিপি ছিলেন। এছাড়া আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজ, ফজর আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বেড়বাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাড়িবাথান দাখিল মাদ্রাসা এবং জিয়ানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপনেত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই এমপি, সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ-২ আসনের এমপি তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমি, ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আযম খান চঞ্চল, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার, আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. রবিউল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম হিরণ চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া জেরিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এম এ কবীর, সাধারণ সম্পাদক শাহিদুর রহমান সন্টুসহ ইউনিটির সকল সদস্য।
Leave a Reply