অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে সরকার। শুধু তাই নয়, এসব ক্লিনিকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকার ওষুধও দেয়া হচ্ছে। জনগণ এসব সেবা ঠিক মতো পাচ্ছে কি না তা দেখার জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গণভবনে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস অনুষ্ঠানে এই নির্দেশনা দেন তিনি। দেশে এই প্রথমবারের মতো জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস পালন করা হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামীস লীগ সরকার সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। তাদের এগিয়ে নিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। আমরাই শিক্ষার্থীদের বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার করে দিচ্ছি। ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব সেটা করেদিয়েছি। ৭৩ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করার কারণে ঘরে বসে চাকরির আবেদনসহ যাবতীয় সেবার কাজ করতে পারে। আমরা তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সিং শেখাচ্ছি। ট্রেনিং নিয়ে বিদেশেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ সঠিকভাবে সেবাটা পাচ্ছে কি না; বিনাপয়সায় যে ৩০ প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সেটা মানুষ পাচ্ছে কি না তা দেখতে হবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। বাইরে থেকে আমাদের অনেক কিছু আনতে হয়। আমরা আমাদের দেশের মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয়; ইউক্রেন যুদ্ধের পরে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আমাদের চালু আছে। ৫১ লাখ জন উপকারভোগী। তাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। বিনাজামানতে বর্গাচাষিরা কখনো কৃষি ঋণ পেত না। এখন আমরা দিচ্ছি বিনাজামানতে। তাতে তারা জমি চাষ করতে পারে। মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে আর ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, একজন কৃষক যাতে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন কৃষকদের সারের জন্য হাহাকার করতে হয় না। বিএনপির আমলে সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। কৃষকদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দিই।
সরকারপ্রধান বলেন, আামাদের নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে হবে। যার যতোটুকু জমি আছে তাতেই চাষ করতে হবে। জমি খালি রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে আপনারা বৃক্ষ রোপণ করবেন। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হন। কারণ যে টাকা খরচ হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে তার অল্প টাকা মূল্য ধরা হয়। এখানে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এখানে বড়লোকরাই সুবিধা ভোগ করে। সেই কারণে আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের সাধারণ মানুষ যেভাবে ব্যবহার করে তাদের জন্য একটা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছি। জেলা, উপজেলা, পৌর ও সিটি করপোরেশন ইউনিয়ন আইন এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।
বক্তব্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে জনগণকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। বলেন, মশা মেরে শেষ করা যাবে না। সব মানুষকে পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকতে হবে। সবাইকে সচেতন হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিএনপির আমল থেকে প্রায় ছয়গুণ বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির আমল থেকে প্রায় ছয়গুণ বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
যেসব জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন অপকর্মের কারণে সাময়িক বরখাস্ত এবং মামলার আসামি হয়েছেন তাদেরকে ছাড়া দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রায় ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে দুপুর ৩টা পর্যন্ত।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান।
Leave a Reply