22 Nov 2024, 12:43 pm

কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মাটিতে আদা চাষ করলে মাটির আদ্রতা রক্ষা করা যায় না। এতে ঘাসের যন্ত্রণায় মাটি শক্ত হয়ে যায়। ফলে আদার বিস্তারে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ফলন কমে যায়। আর বর্ষাকালে মাটিতে পানি জমে আদা পঁচে যায়। কিন্তু বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে এ ধরনের কোনো ঝুঁকি থাকে না। বস্তায় মাটি নরম থাকে ঘাস কম হয়।

অন্যদিকে বস্তায় ছিদ্র থাকায় বর্ষাকালে পানি জমে না। ফলে জমিতে চাষাবাদের চেয়ে বস্তায় আদার ফলন অনেক বেশি হয়। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা এ বছর নতুন পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করেছেন।

কিশোরগঞ্জ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, উচ্চমূল্য ও ভেষজ ওষুধিগুণে ভরপুর এবং মসল্লা জাতীয় ফসল। নিত্যদিন রন্ধনশালায় নানা খাবারে স্বাদ বাড়াতে আদার জুড়ি নেই। ওষুধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে আদার চাহিদা ব্যাপক। তাই সারা বছর বাজারে ভোক্তার কাছে এর চাহিদা তুঙ্গে। একসময় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আদার দূর্গ ছিল। আর সমতল জনপদের প্রতিটি কৃষক আদার চাষ করে বাম্পার ফলন পেত। তা সারা বছর বিক্রি করে হালগৃহস্থি দিব্যি চালাত। বর্তমানে আদার বাজার মূল্য আকাশ ছোঁয়া। আদা কৃষকের ভাগ্যের জটও খুলে দিয়েছে। আদা বিক্রি করে অনেক কৃষক হয়েছেন পাকাবাড়ি, গাড়ির মালিক।  কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে বিগত কয়েক বছর ধরে জমিতে আদা চাষ করতে গিয়ে পচনসহ নানা রোগে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষককে লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে অনেক কৃষক আদা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

বর্তমানে বাজারে আদার চাহিদা বেশি থাকায় চাহিদা পূরণে বাইরে থেকে আদা আমদানি করতে হচ্ছে।এতে মোটা অংকের টাকা চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতে আমদানি নির্ভরতা কমাতে জমিতে আদা চাষের বিকল্প কৃষক কম খরচে ভালো ফলনে অধিক লাভের আশায় পতিত, অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছে। যাদের জমি নেই তারা বাড়ির আশেপাশে, আঙিনায়, গাছতলায় বস্তায় আদা চাষ করে বাড়তি আয় করছে। এ সফলতার পথ দেখাচ্ছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিতাই ইউপির পাগলার বাজারের পাঠান ট্রেডাসের স্বত্বাধিকারী রোকন ইবনে আজিজ লিচু বাগানে ৬ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বস্তায় আদা চাষ তুলনামূলক রোগ বালাই ও খরচ কম। ফলনও ভালো, লাভ দিগুণ। ছায়াযুক্ত হওয়ায় খরার কোনো প্রভাব পড়ে না।প্রতি বস্তায় খরচ হয়েছে ৩০ টাকার মতো। যা ৫ টন আদা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

মাগুড়া সিঙ্গের গাড়ি ভেলামারী গ্রামের চাষি আব্দুস ছালাম বসতবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় ২ হাজার ৪০০ বস্তায় আদা লাগিয়েছেন। তিনি জানান, ১১ হাজার টাকা (১০০ কেজি) বস্তা দরে ১৫০ কেজি বীজ ক্রয় করেন। রোপণের সময় প্রতি বস্তায় ৩টি করে বীজ লাগান। চারা হুষ্টপুষ্ট হওয়ার পর পিলাই (মাটা) উত্তোলন করে বিক্রি করেন ২৯ হাজার টাকা। খরচ বাদে ১২ হাজার টাকা আয় হয়। এখন পুরো ফসল লাভ। প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে উৎপাদন হলে ২ হাজার ৪০০ কেজিতে ২৪ বস্তা ফলন হবে। ভালো বাজার পেলে ২/৩ লাখ টাকা আয় হবে। বিশেষ করে চারিদিকে গাছের ছাঁয়ায় কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব নয়। সম্ভব হয়েছে বস্তায় আদা চাষ। যা সবাইকে তাক লাগিয়েছে। এতে অন্য কৃষকরাও বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, চলতি বছর জমিতে ২৩৪ হেক্টরের পাশাপাশি কৃষককে উদ্ধুদ্ধ ও পরামর্শ দিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে ১১ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষ একটি আধুনিক পদ্ধতি। যা ফল বাগানে, পতিত জমিতে, বসতবাড়ির আনাচে কানাচে, এমন কি বাড়ির ছাদে চাষ করা যায়। যা প্রচলিত চাষাবাদের চেয়ে ফলন বেশি হয়। এতে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বস্তায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা নিট লাভ হবে। এ আদা চাষে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে যোগ হবে।কৃষকরাও লাভবান হবেন। দেশের বাজারে আদার ঘাটতি পূরণ হবে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9982
  • Total Visits: 1268088
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১২:৪৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
18192021222324
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018