অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতির সরাসরি রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমার পাশাপাশি অনলাইনে মনোনয়ন জমাদানের বিধান যুক্ত হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের গেজেটও জারি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রতীক সংরক্ষণে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ৪৪টি প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৫টি প্রতীক রাখা হয়েছে। নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ২০০৮ সালে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় ১৪১টি প্রতীক সংরক্ষণ করে। এরমধ্যে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ১০২টি প্রতীক ছিল।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিধিমালা সংশোধন করে নিবন্ধিত দলের জন্য ৩৯টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৫টি মিলিয়ে ৬৪টি প্রতীক সংরক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন।
দলীয় প্রতীক : নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র (এলডিপি) ছাতা, জাতীয় পার্টি-জেপি’র বাইসাইকেল, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল’র (এম.এল) চাকা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ’র গামছা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি’র (সিপিবি) কাস্তে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ’র নৌকা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’র (বিএনপি) ধানের শীষ, গণতন্ত্রী পার্টি’র কবুতর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’র (ন্যাপ) কুঁড়ে ঘর, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি’র হাতুড়ী, বিকল্পধারা বাংলাদেশ’র (বিডিপি) কুলা, জাতীয় পার্টি’র (জাপা) লাঙ্গল ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’র (জাসদ) মশাল প্রতীক বরাদ্দ রয়েছে।
আর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র তারা, জাকের পার্টি’র গোলাপ ফুল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ’র মই, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি’র গরুর গাড়ি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন-বিটিএফ’র ফুলের মালা, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন’র বটগাছ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ’র হারিকেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি’র আম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র খেজুর গাছ, গণফোরাম’র উদীয়মান সূর্য, গণফ্রন্ট-জিএফ’র মাছ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ’র গাভী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি’র কাঁঠাল, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ-আইএফবি’র চেয়ার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’র হাতঘড়ি, ইসলামী ঐক্যজোট-আইওজে’র মিনার ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’র রিকশা প্রতীকে নির্বাচন করবে।
এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র হাতপাখা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট-বিআইএফ’র মোমবাতি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি’র কোদাল, খেলাফত মজলিল’র দেওয়াল ঘড়ি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল’র হাত(পাঞ্জা), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট-মুক্তিজোট’র ছড়ি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ’র টেলিভিশন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম’র সিংহ, বাংলাদেশ কংগ্রেস’র ডাব, তৃণমূল বিএনপি’র সোনালী আঁশ, ইনসানিয়াত বিপ্লব’র আপেল, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ’র মটরগাড়ি (কার), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম’র নোঙ্গর ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি’র একতারা প্রতীক সংরক্ষিত রয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৫টি প্রতীকগুলো হচ্ছে- কলার ছড়ি, খাট, ঘণ্টা, ট্রাক, তবলা, তরমুজ, দালান, ফুলকপি, বাঁশি, বেঞ্চ, বেলুন, মাথাল, রকেট, স্যুটকেস, কেটলি, আলমিরা, থালা, ঢেঁকি, চার্জার লাইট, মোড়া, কাঁচি, ফ্রিজ, সোফা, দোলনা, ঈগল।
অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা যেভাবে : সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর চেহারা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ছবির সঙ্গে মিলতে হবে।
নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনও প্রার্থী বা প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী বা প্রার্থীর প্রতিনিধি মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে তা সরাসরি দাখিল করতে পারবেন। অথবা, অনলাইনে মনোনয়নপত্র পূরণ ও দাখিলের জন্য কোনো প্রার্থী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট লিংকে (পোর্টাল) প্রবেশ করে রেজিস্ট্রেশন করে মনোনয়নপত্র করতে পারবেন।
অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে পোর্টালে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা ভোটার নম্বর, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি এবং নির্বাচনি এলাকার নম্বর ও নাম এন্ট্রি করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড পাওয়া যাবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের বায়োমেট্রিক ফিচারে সংরক্ষিত মুখাবয়ব তথ্যের সঙ্গে প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর চেহারা শনাক্তকরণ (ফেসিয়াল রিকগনিশন) করতে হবে।
কোনও প্রার্থী পোর্টালে প্রবেশ করে পর্যায়ক্রমে মনোনয়ন, ব্যক্তিগত তথ্যাদি ও হলফনামা সংক্রান্ত তথ্যাদি এন্ট্রি করবেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (হলফনামা, আয়কর প্রদান সংক্রান্ত কাগজপত্র, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়ন সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ) স্ক্যান করে পিডিএফ আকারে সংযুক্ত করবেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি দাখিল করতে হবে।
প্রার্থী পোর্টালে রক্ষিত অনলাইন পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করে জামানত বাবদ নির্ধারিত অর্থ প্রদান করার পর মনোনয়নপত্রটি দাখিল করতে হবে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রার্থীর প্রদত্ত মোবাইল ফোনে মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার, মনোনয়নপত্র বাছাই এর স্থান ও তারিখ, মনোনয়নপত্র বাছাই এর সিদ্ধান্ত, প্রার্থীতা প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পর্যায়ক্রমে এসএমএস এর মাধ্যমে পাঠানো হবে এবং এই তথ্যাদি পোর্টালেও দেখানো হবে।
রিটার্নিং অফিসার, প্রয়োজনে, অনলাইনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদির মূল কপি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের নির্ধারিত দিনে তার কাছে দাখিল করার নির্দেশনা দিতে পারবেন।
১২ ডিজিটের টিআইএন নম্বরের সঙ্গে সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাপত্র জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, ভোটার, দল, প্রার্থী, প্রতীক, ছবি ও ভোটকেন্দ্রের তথ্য জানানোসহ একগুচ্ছ সেবা দিতে থাকবে ‘নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ’। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আহেই এ অ্যাপ করা হবে।
Leave a Reply