অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর পাশবিক হামলার প্রায় ৫০ দিন পর হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির আওতায় এখন সেখানে বন্দি বিনিময় চলছে। তবে গাজায় কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধে তেল আবিব বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।
গাজার গণহত্যাকে ইহুদিবাদী ইসরাইল তার বিজয় হিসেবে বিবেচনা করতে পারে তবে এই শাসকগোষ্ঠী প্রকৃত যুদ্ধে যে জয়ী হয়নি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে তেল আবিব সররকারের সামরিক উদ্দেশ্য তো পূর্ণ হয়নিই বরং এতে বিপুল মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় অক্টোবরে ঘোষণা করেছে যে যুদ্ধের দৈনিক ব্যয় প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলার যার অর্থ মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। যদিও যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত বার্ষিক বাজেট প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। অন্য কথায়, ৫০ দিনের যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলেছে যা এই শাসক গোষ্ঠীর বার্ষিক সামরিক বাজেটের প্রায় ৭০ ভাগের সমতুল্য।
অন্যান্য রিপোর্টে, যুদ্ধের অর্থনৈতিক খরচ অনেক বেশি হয়েছে। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর টিভির চ্যানেল ১২ এই সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র পরিচালকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিষয়ে একটি রিপোর্ট ছেপেছে। বৈঠকটি প্রায় ৩ ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল এবং এতে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এই বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য অনুসারে, যুদ্ধে প্রতিদিন ইহুদিবাদী শাসক প্রায় এক বিলিয়ন শেকেল খরচ করে এবং এর মধ্যে রয়েছে সৈন্যদের বেতন প্রদান সহ যুদ্ধের সরাসরি খরচ যাতে প্রতিটি সদস্য প্রতিদিন ১০০০ শেকেল পায়। এছাড়া যুদ্ধে বিমান বাহিনীর পাইলটদের বেতন এবং এই বাহিনীর জন্য জ্বালানি এবং খাদ্য ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহও মিটাতে ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীকে বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
এছাড়াও, যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের বাজেট ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস রিপোর্ট করেছে যে ইসরাইলের বাজেট ঘাটতি পরের বছর (২০২৪) তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে যা তার জিডিপির প্রায় ৫-৮%। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী তার ৩ লাখ ৬০ হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে সামরিক সেবার জন্য ডেকেছে যা গাজার বিরুদ্ধে তার অতীতের যুদ্ধের তুলনায় এই সরকারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংখ্যা এবং এতে অনেক শ্রমিক ও কর্মচারীকে তাদের কর্মস্থল ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
এই সমস্ত পরিস্থিতির কারণে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ২০২৩ সালের বাজেট সংশোধন শুরু করেছে। যদিও বিষয়টি এখন অভ্যন্তরীণ বিবাদের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে কিন্তু চলমান যুদ্ধের ছায়ায় তার আওয়াজ খুব একটা শোনা যায় না।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ৫০ দিনের যুদ্ধের ফলে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধের আগে এই অবৈধ রাষ্ট্রে নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
Leave a Reply