অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : স্নাতক (সম্মান) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফলে নিজ নিজ বিভাগে প্রথম থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় উত্তরপত্রের কভারশিট পরিবর্তন করে চূড়ান্ত ফলাফলে তাদের এক বিষয়ে ফেল দেখানো হয়েছে। এমন অভিযোগ তুলেছেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়া অর্ধশত মেধাবী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থীর দাবি, যে বিষয়ে তাদের ফেল দেখানো হয়েছে সেই বিষয়ে তারা কোনোভাবে ফেল করার মতো পরীক্ষা দেননি। অসৎ উদ্দেশ্যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাদের উত্তরপত্র পরিবর্তন করেছে। নিজেদের এমন অপ্রত্যাশিত ফল বিপর্যয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অসাধু চক্র প্রতিবছর উত্তরপত্রের কভার শিট পরিবর্তন করে প্রথম সারির শিক্ষার্থীদের ফল বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কভারশিট পরিবর্তন করে একজনের উত্তরপত্র আরেকজনের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। ফলে মেধাবী অনেক শিক্ষার্থীর শেষ বর্ষের ফল ফেল আসছে। এ নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে যথাক্রমে জিপিএ ৩.৭১, ৩.৬৮ এবং ৩.৫৯ পেয়ে প্রথমশ্রেণি অর্জন করেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। কিন্তু চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় তাকে এক বিষয়ে (ভৌত রসায়ন-৪) অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। ফলে তার ফলাফল ফেল এসেছে।
একই শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের নুর আলম। তিনি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের প্রতিটিতে প্রথম শ্রেণি অর্জন করে বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় তাকে ‘জীববৈচিত্র্য ও বিবর্তন’ বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী প্রদীপ কুমার রায়সহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে।
রসায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, ‘পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রে কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরপত্রের কভারশিট পরিবর্তন করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। গত ৪-৫ বছর ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে এই কাজ করে আসছে। আমার মতো অনেকেই এই অসৎ চক্রান্তের শিকার। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। নিজের খাতা নিজে দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাই।’
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নুর আলমের দাবিও একই। তিনি বলেন, ‘যে বিষয়ে ফেল দেখানো হয়েছে সে বিষয়ে ফেল করার কোনও সুযোগ নেই। আমি নিশ্চিত, আমার খাতা পরিবর্তন করে আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে। আমার উত্তরপত্র আমি নিজ চোখে দেখতে চাই। উত্তরপত্রে আসলে কী ঘটেছে তা দেখে বুঝতে চাই।’
নুর আলম আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে কলেজ অধ্যক্ষের পরামর্শে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে দেখা করে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়ে এসেছি। কিন্তু তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। এখনও কোনও সুরাহা করেননি। আমরা সবাই মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত। আমরা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল। তাদের প্রত্যেকের বিগত পরীক্ষার ফলাফল অনেক ভালো। শেষ বর্ষে কেন তাদের একটি করে বিষয় ফেল আসলো তা বোধগম্য নয়। তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানাই। কারণ শুধু এবারই নয়, কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কাছে এমন অভিযোগ পাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। কারও উত্তরপত্র পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একজনের উত্তরপত্রের নিথো কোডের সঙ্গে আরেকজনেরটা মিলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগ সঠিক নয়।’
উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তারা আমাদের শিক্ষার্থী। তাদের বিষয়ে আমাদের মাথাব্যথা আছে। পরীক্ষার উত্তরপত্র ফিরে আসলে আমরা ওই শিক্ষার্থীদের সবগুলো খাতা আবারও যাচাই করে দেখবো। কোনও অসঙ্গতি থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ উত্তরপত্র দেখার দাবি নাকচ করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত অনার্স চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার (২০২১) ফল প্রকাশিত হয়।
Leave a Reply