অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাজায় সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ এই আগ্রাসী সরকার প্রতিরোধকামী কমান্ডারদের হত্যাকে কৌশলে পরিণত করেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী শাসক প্রতিরোধকামী কমান্ডারদের বিরুদ্ধে ৪টি সন্ত্রাসী অভিযান চালিয়েছে। সিরিয়ায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডবাহিনী আইআরজিসির অন্যতম কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইয়্যেদ রাজি মুসাভি, লেবাননের হিজবুল্লাহর অপারেশন বিভাগের অন্যতম প্রধান কমান্ডার ও কর্মকর্তা উইসাম হাসান আল-তাওয়িল, হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের উপপ্রধান সালেহ আল-আরুরি ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলায় শাহাদাৎ বরণ করেছেন। এছাড়া মার্কিন সন্ত্রাসী বাাহিনীর ড্রোন হামলায় ইরাকের আল-নুজবা আন্দোলনের কমান্ডার আবু তাকাভি আল-সাইদিও নিহত হন। এদিকে, হিব্রু সূত্রে প্রকাশিত একটি নথি অনুযায়ী, ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিভাগকে প্রতিরোধকামী নেতাদের নির্মূল করার জন্য একটি ব্যাপক পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কোন পরিস্থিতিতে এবং কোন লক্ষ্য হাসিলের জন্য এসব হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে? প্রকৃতপক্ষে এসব হত্যাকাণ্ড এমন একটি পরিবেশে পরিচালিত হয়েছে যেখানে গাজার বিরুদ্ধে ৩ মাসের যুদ্ধ অতিক্রম করলেও ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী তার দুটি প্রধান সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। যেমন সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামীদের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দীদেরকে জোরপূর্বক মুক্ত করে নিয়ে আসা এবং হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া। অন্যদিকে এসব হত্যাকাণ্ড এমন এক পরিস্থিতিতে সংঘটিত হয়েছে যখন দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেড়ে গেছে এবং একইসঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া বা বন্দীদের মু্ক্ত করার বিষয়ে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার মধ্যে উত্তেজনা ও মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা লাভবান হওয়ার জন্য এবং মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে চলমান চাপ কমানোর জন্য প্রতিরোধ কমান্ডারদের হত্যার কৌশল বেছে নিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সুতরাং, হত্যাকাণ্ড থেকে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অন্যতম লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি আরও দুটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রতিরোধের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করা এবং যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করা। প্রকৃতপক্ষে গাজায় পরাজয় এড়াতে ইহুদিবাদী শাসক আমেরিকার উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে একটি বড় যুদ্ধ বাধানোর পায়তারা করছে।তেল আবিব সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে চলমান গাজা যুদ্ধে আমেরিকাকে টেনে নিয়ে আসা এবং ইরানকে জড়িয়ে গাজায় অপমান অপদস্ত হওয়া থেকে নিজের গা বাছানো।
পরিশেষে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পশ্চিম এশিয়া জুড়ে প্রতিরোধকামী কমান্ডারদের হত্যার জন্য একটি অভিযান চালানোর বিষয়ে তেল আবিব সরকারের পরিকল্পনার প্রতি ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে সন্ত্রাস কার্যক্রম চালিয়েও ইহুদি-মার্কিন অক্ষ প্রতিরোধকামী ফ্রন্টগুলোকে দুর্বল করতে পারে নি কারণ গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডাররা এর আগেও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছিল। আল-আকসা তুফান অভিযান প্রমাণ করছে যে ইসরাইলি বাহিনীর এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধকামীতাকে তো থামাতে পারেই নি বরং এতে বিপরীত ফল হয়েছে এবং প্রতিরোধ শক্তি আরো দৃঢ় হয়েছে। একই সঙ্গে ইহুদিবাদী শাসকদের মনে রাখতে হবে যে প্রতিরোধের কৌশলগত ধৈর্য সীমাহীন ধৈর্য নয়। বরং তাদের জন্য একটি কঠোর প্রতিশোধের অপেক্ষা করছে।
Leave a Reply