এম এ কবীর,ঝিনাইদহ : দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার শেরপুর জেলার নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানা তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে জেলে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, নিন্দা, প্রতিবাদ এবং সংশ্লিষ্ট ইউএনওর অপসারণ এবং বিচার দাবি করেছেন ঝিনাইদহের সাংবাদিক মহল। গত ৫ মার্চ (মঙ্গলবার) নকলা উপজেলার ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ (ভূমি) সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে ৬ মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠান। এর আগে সাংবাদিক রানা তথ্য অধিকার আইনে জাইকার একটি প্রকল্পের অনিয়মের তথ্য চেয়ে নকলা উপজেলার ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। এই তথ্য দ্রুত চাওয়া ও পাওয়ার তদবির নিয়ে ইউএনও অসন্তোষ হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত রানাকে জেলে পাঠান।
এর প্রতিবাদ এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করে ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটিরি সভাপতি এম এ কবীর,সাধারণ সম্পাদক শাহিদুর রহমান সন্টু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সহ সংগঠনের সকল সাংবাদিক এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন- এ ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নজীরবিহীন নগ্ন হস্তক্ষেপ। এ কারনেই দেশের সংবাদ মাধ্যম গণমাধ্যম হয়ে উঠতে পারছে না। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে জেলে পাঠানো এবং তথ্য চাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বাসিয়ে সাংবাদিকের বিচারের ঘটনা এ দেশে এটাই প্রথম। ইউএনওর এমন হস্তক্ষেপ গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম বিকাশে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই ইউএনওর দ্রুত অপসারণ এবং দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
এ দিকে ঘটনাটি আইন অনুযায়ী খতিয়ে দেখতে আজ (৯ মার্চ) তথ্য কমিশনের পক্ষ থেকে তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে আমরা জানেতে পেরেছি।
তথ্য অধিকার আইনের ধারা ২৫(৫) অনুযায়ী এ বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য তাকে এই দায়িত্ব প্রদান করা হয়। শহীদুল আলম ঝিনুক আইনানুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করে, সিদ্ধান্ত কার্যপত্র কমিশনে দাখিল করবেন।
শনিবার তথ্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘ দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ৭ মার্চ ২০২৪ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম কলামে ‘তথ্য চেয়ে আবেদন করে দেশ রূপান্তর সাংবাদিক জেলে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি তথ্য কমিশন বাংলাদেশ’র দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার দেশ রূপান্তর পত্রিকার সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানা ওই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদন করার জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। সংবাদটি কমিশন পর্যালোচনা করেছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘তথ্য চাওয়ার কারণে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকতে পারেন বিধায় তথ্য অধিকার আইন- ২০০৯’র ধারা ২৫(৪) অনুযায়ী উপরোক্ত বিষয়ে অনুসন্ধান করা সমীচিন মর্মে তথ্য কমিশন একমত পোষণ করে। তথ্য অধিকার আইনের ধারা ২৫(৫) অনুযায়ী বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি আইনানুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করে সিদ্ধান্ত কার্যপত্র কমিশনে দাখিল করবেন।’
ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে তথ্য কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। এবং সারা দেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নিন্দা,প্রতিবাদ এবং গৃহীত কর্মসূচীর সাথে একত্মতা ঘোষণা করা হয়।
Leave a Reply