ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরা সদরে কৃষকরা বোরো ধানের ফসলের জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসলের বাম্পার ফলনের আশা করছে। এই ২০২৪ সাল মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার ৭ শত নব্বই হেক্টর।
গাছের মরা ডাল, কঞ্চি বা বাঁশের আগা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার নাম পার্চিং। পার্চিংয়ে পাখি বসার সুযোগ পেলে তার দৃষ্টিসীমায় কোনো ক্ষতিকর পোকা দেখা দিলে তা ধরে খেয়ে ফেলে। ধান ক্ষেতের মাঝে ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে দূরে গাছের ডাল পোঁতা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে বসছে শালিক, ফিঙে, বুলবুলিসহ নানা জাতের পাখি। একটু পরপর ডাল থেকে জমির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে পাখিগুলো আর ক্ষেতের পোকা ধরে খাচ্ছে। যে জমিতে পোকা বেশি সেই জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি। ধানখেতে বেশি ক্ষতি করে মাজরা পোকা। এই পোকা ধান গাছে গর্ত করে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি মাজরার মথ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ বাচ্চার জন্ম হয়। শুধু একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই লাখের উপরে পোকা ধ্বংস করা সম্ভব। যার ফলে ধান উৎপাদনে কৃষকদের খরচের পরিমাণ
কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় বোরো ধান চাষিদের প্রতি একরে কীটনাশক খাতে খরচ কমেছে দেড় হাজার টাকারও বেশি।
বোরো ধানে পোকা দমনে কৃষকরা ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে শত্রু পোকা নিধনের সাথে বন্ধুপোকা মারা যায়। এছাড়া কীটনাশকের ব্যবহারে মানবদেহে রোগব্যাধিসহ নানা ধরণের ক্ষতি হয়ে থাকে। আর কীটনাশকমুক্ত ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে পার্চিং পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন মাঠে পার্চিং পদ্ধতিতে পোকা দমন করছে।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, ধানক্ষেতে পার্চিং ডাল মাটিতে লাগানো একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কৃষক ভাইয়েরা তাদের নিজেদের ক্ষেতে যেমন কীটনাশকের ব্যবহার ব্যতিত পোকা মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং একই সাথে তাদের উৎপাদন খরচও কমছে। তিনি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাগুরা সদর সব সময় কৃষকের এবিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক ও জনসচেতনতা তৈরী করে যাচ্ছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি উপপরিচালক কৃষিবিদ ডঃ ইয়াছিন আলী জানান, জমিতে পার্চিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে পাখি ডালে বসে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় খেয়ে ফেলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আর শতভাগ প্রাকৃতিক ফসল উৎপাদন করা যায়।
মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ ইতিমধ্যে মাগুরা সদর সহ মাগুরা জেলার সব কয়টি উপজেলায় ১০০% পার্চিং পদ্ধতি সম্পন্ন করেছেন।
Leave a Reply