অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অবশেষে ব্যাপক সমালোচনা আর দলীয় নেতাদের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হিসেবে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই আকস্মিক ঘোষণায় স্বস্তি দেখা দিয়েছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে।
আগামী ১৯ আগস্ট ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস মনোনয়ন পেতে পারেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও ইতিমধ্যে কমলা হ্যারিসকে জোড়ালোভাবে সমর্থন দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ ডেমোক্রেটিক দলের অনেক সিনিয়র নেতারা। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কমলা হ্যারিসকে সরাসরি সমর্থন না দিলেও তাকে মৌনভাবে সমর্থন দিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠে ছিল ৮০ ঊর্ধ্ব প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আদৌ কি নির্বাচনী দৌড়ে টিকতে পারবেন? আর থাকলেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে একেবারে চির ধরা প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হবেন না তো?
এই যখন অবস্থা তখন টালমাটাল ছিলেন দলের কর্তা ব্যক্তিরাও, বিশেষ করে যারা অর্থের যোগানদাতা। একে একে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন বাইডেনের থেকে। খবর ছিল পর্যাপ্ত নির্বাচনী তহবিল পাচ্ছেন না বাইডেনের দল। এমন অবস্থা হলে নির্বাচন করাটাও অসম্ভব হবে।
ঠিক তখনই ঘোষণা এলো প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছ থেকে। তিনি নন, ট্রাম্পকে রুখতে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা পশ্চিমা বিশ্বে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মার্কিন বিশেষজ্ঞরা যে মত দিচ্ছেন সেখানে বলা হচ্ছে- নির্বাচনের তহবিলের জন্য অর্থের যোগানই ছিল তাঁর এমন সিদ্ধান্তের মূল কারণ। এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট আর্থিক বিষয়টি সামাল দিতে পারবেন। তারা আশা করছেন, দাতারা এবার আর মুখ ফিরিয়ে নেবেন না।
পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ২৬৪ জন সদস্যের মধ্যে ২০ জন প্রকাশ্যে বাইডেনকে সরে যাবার আহ্বান জানান। গোপনেও এমন মত দিয়েছেন আরও অনেকেই। তহবিলে অর্থ না দেয়ার ঘোষণা দেন প্রভাবশালী ডিজনী পরিবার।
এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প শিবির থেকে বলা হয়- রিপাবলিকানরা এমন একটি খবরের জন্য আগেই প্রস্তুত ছিল। কারণ, বাইডেনের পরিবর্তে কমলা হ্যারিস ছাড়া ডেমোক্র্যাটদের আর কোনো উপযুক্ত প্রার্থী নেই। অনেক রিপাবলিকান বলছেন, ট্রাম্পের বিপক্ষে বাইডেনের চেয়েও একজন দুর্বল প্রার্থী কমলা।
ইতিমধ্যে কমলা হ্যারিসের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন রিপাবলিকানরা। জনমত জরিপে উঠে আসা বাইডেন প্রশাসনের ‘জনপ্রিয় নয়’ এমন অভিবাসন নীতির জন্য তাকে দায়ী করছে।
কমলা হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে সক্ষম হতে পারেন, যারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাইডেনের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বলে জনমত জরিপে উঠে এসেছিল।
কমলা হ্যারিসের বয়স ৫৯। পূর্ণ উদ্যমী হয়ে তিনি প্রচারের ময়দানে নামবেন বলেই অনুমান করা যেতে পারে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এতদিন যে বয়সের বিষয়কে সামনে রেখে বাইডেনকে আক্রমণ করে এসেছিলেন, তার একটা মোক্ষম জবাব দিতে পারবেন।
জো বাইডেনের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভাইস প্রেসিডেন্ট নতুন অনুদান হিসেবে ৮ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন, যা এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর একদিনে সংগ্রহ করা অনুদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এর পাশাপাশি, বাইডেন-হ্যারিসের তহবিল থেকে ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ পাওয়া প্রায় ১০ কোটি ডলার হ্যারিসকে তার আসন্ন নির্বাচনি প্রচারের জন্য একটা মজবুত আর্থিক ভিত্তি দিয়েছে।
Leave a Reply