24 Nov 2024, 02:50 pm

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তার রাজনীতি ছিল গ্রামভিত্তিক ও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে। তিনি রাজনীতি করেছেন সমাজের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ, কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ জনগণের পক্ষে।

মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার (১৬ নভেম্বর) এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন ।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন।

আবদুল হামিদ বলেন, কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষায় মওলানা ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ৫২-র ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামেও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেশ ও জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন দেশ ও জনগণের প্রতি তার গভীর ভালোবাসারই প্রতিফলন।

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আদর্শ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আবদুল হামিদ। তিনি মওলানা ভাসানীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। সূত্র : বাসস।

মওলানা ভাসানী উপমহাদেশের রাজনীতিতে অবিস্মরণীয় নাম : রাষ্ট্রপতি

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে তা বাতিল করতে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।

২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে দেয়া ওই রায়ের ৩৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পেয়েছেন বলে আজ জানান রিটের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩ পাস হয়। ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননার আইন রহিত করে ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আইনটির গেজেট প্রকাশিত হয়। পরে একই বছরের ২৫ মার্চ নতুন আইনের ৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৩(২) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দুই আইনজীবী হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগ রুল জারি করে। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করে।

আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩ এর ৪ ধারায় নির্দোষ প্রকাশনা বা বিতরণ অবমাননা নয়, ৫ ধারায় পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ আদালত অবমাননা নয়, ৬ ধারায় অধস্তন আদালতের সভাপতিত্বকারী বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত অবমাননা নয়, ৭ ধারায় কিছু ক্ষেত্র ছাড়া বিচারকের খাসকামরায় বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ আদালত অবমাননা নয় বলে আইনে ব্যাখ্যাসহ বলা হয়েছে। আইনের ৯ ধারায় আদালত অবমাননার পরিধি বিস্তৃত না হওয়া এই আইনে শাস্তিযোগ্য নয় এমন কোনো কাজ আদালত অবমাননা বলে গণ্য হবে না।

আইনের ১০ ধারায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কথা বলা হয়েছে। ১০(১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রচলিত আইন, বিধিমালা, সরকারি নীতিমালা, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, স্মারক ইত্যাদি যথাযথভাবে অনুসরণ করে জনস্বার্থে ও সরল বিশ্বাসে কাজ করলে তা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে না।

১০(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এর অধীনে করা কাজের বিষয়ে আদালতের আদেশ-নির্দেশ যথাযথ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন বা প্রতিপালন করা অসম্ভব হলে তার জন্য আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা যাবে না এবং আইনের ১৩(২) ধারায় বলা হয়েছে, আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তি হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আপিলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে এবং আদালত তাতে সন্তুষ্ট হলে তাকে ক্ষমা করে দন্ড মাফ বা কমাতে পারবেন।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নিয়ে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে মনে হয় নির্দিষ্ট একটি গ্রুপকে আদালত অবমাননার দায় হতে সুরক্ষা দেয়ার জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

আদালত বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৮ অনুসারে যে কোন নাগরিক আদালতের রায় অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সর্ব্বোচ্চ আদালত শাস্তি দিতে পারেন এবং অনুচ্ছেদ ১১২ অনুসারে রাষ্ট্রের সকল কর্তৃপক্ষ, এক্সিকিউটিভ এবং বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিগণ সুপ্রিমকোর্টের কাজে সাহায্য করবে। সংবিধানে উক্ত নির্দেশনা থাকা শর্তে আদালত অবমনানা আইনের উল্লেখিত ধারাসমূহ সংবিধানের উক্ত নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এছাড়া সংবিধানে আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান এবং একই প্রতিকার পাওয়ার বিধান থাকলেও উক্ত ধারাগুলো বিশেষ ব্যক্তিদেরকে সুরক্ষা দিয়েছে। এসব কারণে আদালত অবমাননা আইনের ওই ধারাগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বৈষম্যমূলক।

রায়ে আদালত আরও বলেন, ২০১৩ সালের আইনে উল্লেখিত মূল ধারাগুলো না থাকলে আইনের অন্যান্য বিষয়গুলো অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। সে কারণে আদালত অবমাননার আইন-২০১৩ সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। রায়ে আদালত ১৯২৬ সালের আদালত অবমনানর আইন- পূর্ণবহাল করেছে বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

আদালত অবমাননা আইন বাতিলে হাইকোর্টের পুর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ