অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ উদ্বোধন করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রোববার (১২ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এ অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। এসময় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান ও ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
ইসি আহসান হাবিব বলেন, আমাদের কমিশন প্রযুক্তি নির্ভর। অতীতে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, হাতি-ঘোড়া নিয়ে মনোনয়ন সাবমিমশন করা হতো। ফলে আচরণবিধি ভঙ্গ হতো। এছাড়া নমিনেশন সাবমিশনে বাধা দেওয়া হতো। তবে এ অ্যাপসে সেই সমস্যা থাকবে না। ঘরে বসেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ভোটার যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন। আমরা ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছি, এটা স্বচ্ছতার প্রতীক। এ অ্যাপ ফেয়ার এবং ট্রান্সপারেন্ট। আশা করি অ্যাপসের সুফল ভোগ করবো। এ উদ্যোগ বিদেশেও প্রসংশিত হবে।
এ অ্যাপসের মাধ্যমে বিভাগওয়ারী আসনগুলোর তথ্য, যেমন-মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য (হলফনামা, আয়কর সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী) জানতে পারবেন।
এছাড়া, অ্যাপসটির মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলী ‘নোটিশ’ আকারে প্রদর্শিত হবে। অ্যাপসটির সাহায্যে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর চলমান ভোটিং কার্যক্রমের periodical তথ্য (casted vote) জানা যাবে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
আহসান হাবিব খান জানান, নির্বাচনী ফলাফলের সার্বিক অবস্থাসহ (status- যেমন: ‘গণনা চলে…’ ইত্যাদি) ‘ফলাফল বিশ্লেষণ’ নামক অপশনের মাধ্যমে একজন ভোটার পূর্বতন নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচনের ফলাফলের গ্রাফিক্যাল বর্ণনাও পাবেন।
প্রযুক্তিনির্ভর ভোট ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় ছিল উল্লেখ করে এ নির্বাচন কমিশনার জানান, এ ধারাবাহিকতায় মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিল ও মোবাইল অ্যাপস এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নির্বাচন ব্যবস্থাপনাও এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ যুগে যুক্ত হল। তফসিল ঘোষণার পর তা সবার জন্য উন্মুক্ত হবে।
মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় শোডাউন, মিছিল করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা যেমন রোধ হবে, এছাড়াও নেমিনেশন জমাদানে বাধা দেওয়া অথবা প্রত্যাহারের জন্য চাপ (বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে) করা সম্ভব হবে না। সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারেরর যে কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন জমাসহ নির্বাচনী সেবা সহজতর হবে। এ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নির্বাচনী হলফনামা, ভোটকেন্দ্র সংক্রান্ত তথ্য, নির্বাচনী তথ্য মিলবে।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় যে ধরনের পরিবর্তন আনবে
>> ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্রের নাম ও ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে পূর্ব ধারণা নিশ্চিতভাবে ভোটার সময়ের অপচয়, বিড়ম্বনা এবং কিছুক্ষেত্রে, ‘হয়রানি’ হতে রক্ষা করবে।
>> ভোটার নম্বর জানা থাকার কারণে ভোটার তালিকায় সিরিয়াল নম্বর সহজে নির্ণয় হবে, এ জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ক্যাম্পেইনের শরণাপন্ন হতে হবে না।
“ নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য সম্পর্কে সহজে অবহিত হওয়া, তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ, সমসাময়িক ফলাফলের পাশাপাশি নির্বাচনী ফলাফল জ্ঞাত হওয়ার মতো বিষয়গুলো ভোটারদের উদ্দীপ্ত করবে- বলে আশা করা যায়।
>> অ্যাপসের মাধ্যমে একজন ভোটার প্রার্থীদের তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করে পছন্দসই প্রার্থী বেছে নিতে পারেন।
>> ভোটার তার নির্বাচনী আসনে মোট ভোটার সংখ্যা জানতে পারবেন, যাতে করে চূড়ান্ত ফলাফলে ভোটসংখ্যা সংক্রান্ত কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ থাকবে না।
“তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকার কারণে প্রার্থীরাও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন হবেন। সর্বোপরি ভোটার, প্রার্থী, জনগণ এ তিনের আস্থা/বিশ্বাস অর্জনে একধাপ এগিয়ে থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার দিকে অগ্রগামী হবে। আর সার্বিক বিষয়াবলী নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে সহজ, trustworthy করবে” এ অ্যাপ।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার এ পদ্ধতি চালু করতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। যার মধ্যে সফটওয়্যারের পেছনে ৯ কোটি ১১ লাখ এবং হার্ডওয়ারের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
Leave a Reply