23 Nov 2024, 06:06 pm

অবহেলিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-বাঞ্ছারামপুর এখন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের মডেল

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-বাঞ্ছারামপুর এখন শুধু জেলায় নয়, এটি এখন দেশের মধ্যেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের মডেল।
বাঞ্ছারামপুরে ১৯৯৬ সালেও পাকা রাস্তার অস্তিত্ব ছিল নামমাত্র। গোটা উপজেলায় ৫০ কিলোমিটার। আর এখন পাকা রাস্তা ২৮৫ কিলোমিটার। এখন রাস্তার প্রশস্ততাও বেড়েছে। আগেকার আট ফুট রাস্তা বেড়ে হয়েছে ১৬ ফুট থেকে ১৮ফুট। ১২ ফুটের নিচে কোন রাস্তা নেই। আর সেই সময় ফুট ব্রিজ ও কালভার্ট ছিল ৩০০ মিটার। আর এখন প্রায় ৫হাজার মিটার ব্রিজ। যদিও ১৯৯৬ সালে ব্রিজ ছিলো কল্পনাতীত। ছোট-ছোট কালভার্ট, ফুটব্রিজের সাথেই পরিচিত ছিলেন এখানকার মানুষ। এখন ব্রিজের ছড়াছড়ি। ৭৭১ মিটার ও ৫০০ মিটারের দু’টি ব্রিজ ছাড়াও ১০০ মিটারের ওপরে ব্রিজ রয়েছে আটটি। ১০০ মিটারের নিচে এবং ৫০ মিটারের ওপরে ব্রিজের অভাব নেই।
জানা যায় অবহেলিত এই বাঞ্ছারামপুর এখন শুধু এই জেলা নয়, দেশের মধ্যে উন্নয়নের মডেল। দূর্গম এই উপজেলায় জেলা শহর থেকে যাওয়া-আসার ব্যাপার ছিল আঁতকে উঠার মতো। সে কারণে ওই উপজেলা শাস্তিমূলক জায়গা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে জেলার সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে। শাস্তিমূলক বদলীর জন্য বেছে নেয়া হতো ওই উপজেলাকে। দিন পেরিয়ে যেতো বাঞ্ছারামপুর যেতে-যেতে। ২০০৬ সালে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উড়শীউড়া গ্রামের হুমায়ুন কবির। তিনি জানান- তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে বা বাসে করে প্রথমে নরসিংদী যেতাম। সেখান থেকে লঞ্চে মরিচাকান্দি। মরিচাকান্দি থেকে রিকশা বা টেম্পু করে বাঞ্ছারামপুর সদর। এই রাস্তাও ছিলো জরাজীর্ণ। ভোর ৪টা বা ৫টায় রওনা হয়ে বাঞ্ছারামপুর পৌঁছাতে বেলা সাড়ে ১১ টা বেজে যেতো। অন্যপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি হয়ে গৌরিপুর। এরপর হোমনা হয়ে বাঞ্ছারামপুর। তাতে সময় লাগতো ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। একদিনে আসা-যাওয়া কল্পনা করা যেতো না। মাসে একবার বাড়িতে আসতাম। এখনো অফিসের কাজে যেতে হয়। তবে সেই সময়ের সাথে এখনকার ফারাক অনেক। জেলার ভেতর দিয়েই এখন সরাসরি যাওয়া-আসা করা যায় বাঞ্ছারামপুর। আড়াই-তিন ঘন্টায় যেতে পারছি। মোট কথা যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। কড়–ইকান্দি গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান- বাঞ্ছারামপুরে পদায়ন হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে আসতে চাইতেন না। সড়ক ধরে পায়ে হেটে চলা যাবে, এমন অবস্থা ছিলোনা। চারদিকে নদী-আর খাল। ২০০১ সালে তিতাস নদীর ওপর বাঞ্ছারামপুর-হোমনা সেতু হয়। এরপর শলফা এবং সলিমগঞ্জে তিতাস নদীর ওপর সেতু হয়। এভাবে তিতাস নদীর ওপর ওয়াই আকৃতির একটি বিশেষ সেতুসহ ১০টি সেতু নির্মিত হয়। উপজেলার ভেতরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিলো খুব বাজে। উপজেলা সদরের সাথে ইউনিয়নের, ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে যাওয়ার কোন সরাসরি সড়ক ছিল না। নৌকা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। আর এখন পাড়া-মহল্লায় যাওয়ার জন্যে রয়েছে পাকা রাস্তা। শতভাগ সড়ক পাকা।
সময় পরিক্রমায় সেই বাঞ্ছারামপুরের ওপর দিয়ে এখন ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপন কাজ অগ্রগামী হচ্ছে। বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজারের মধ্যে ৩য় মেঘনা সেতু নির্মাণ হলেই উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার এই নতুন দুয়ার। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হবে এই সেতু। এরই মধ্যে বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজার সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১১ সালে ফেরী চলাচল শুরু হয় মেঘনা নদীতে কড়–ইকান্দি-বিশনন্দীর মধ্যে। সেতু নির্মিত হলে এদিকে দিয়ে চট্টগ্রাম এবং সিলেটের দূরত্ব কমবে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়াও গত ১৫ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রসর হয়েছে এই উপজেলা। কয়েক’শ ভবন নির্মিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কৃষি ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সরজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান- বাঞ্ছারামপুরকে আদিগন্ত বদলে দেয়ার কারিগর হচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু করেন উন্নয়নযাত্রা। তাজুল ইসলাম ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসন থেকে। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিবারই বাঞ্ছারামপুরকে সমৃদ্ধ করতে বড়-বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান আগের সাথে এখনকার পার্থক্য অনেক। যদি ফুট ব্রিজ বা কালভার্টের কথা বলি সেগুলো দিয়ে রিকশাও চলাচল করতে পারতোনা। আর রাস্তাগুলোও অনেক প্রশস্ত হয়েছে।
এই ব্যাপারে সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম জানান- আমার সার্বিক কর্মকান্ড বিবেচনায় আমি মনে করি, আগে যারা বিএনপি’র সমর্থক বা ভোটার ছিলো তারাই এখন আমাকে ভোট দেবে। বিএনপি’র সাথেও আমি খারাপ ব্যবহার করেনি। অথচ তারা আমার মায়ের লাশ নিয়ে যেতে দেয়নি। তারপরও আমি তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। ভালো ব্যবহার এবং ন্যায়বিচারের কোন বিকল্প নেই। আমি সেটা করেছি। আর উন্নয়নের বিষয়ে বলবো সেটিতো সবাই দেখতে পাচ্ছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9855
  • Total Visits: 1280054
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:০৬

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018