অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জুলাই অভ্যুত্থানের পর কিছু মিথ্যা মামলা হয়েছে, সেগুলো ঠেকাতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক কারণে পুলিশ নিজ উদ্যোগে কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেনি। তবে বেশ কিছু মিথ্যা মামলা হয়েছে, সেসব মিথ্যা মামলা ঠেকাতে সরকার আইনে নতুন বিধান সংযোজন করেছে।’
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইউএন হিউম্যান রাইটস অফিস বাংলাদেশ ও হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইট যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক কারণে পুলিশ নিজ উদ্যোগে কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেনি। তবে হ্যাঁ বেশ কিছু মিথ্যা মামলা হয়েছে, মামলার এজহারে ১০০, ২০০ বা ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করে এসব মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে ভিকটিম অথবা ভিকটিমের পরিবার। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা মামলা দায়েরের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আজকের দিনে আপনাদের অনেকের মধ্যে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, মানবাধিকারের কতটুকু উন্নতি হয়েছে, অনেকেই বলছেন মানবাধিকার আবার ক্ষয়িষ্ণু ধারায় যাচ্ছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে কয়েকটি তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর একটি জোরপূর্ব গুমের ঘটনাও ঘটেনি। কোনো মানবাধিকার সংগঠন বা গণমাধ্যম একটি রিপোর্টও দিতে পারেনি এ নিয়ে। আমি মনে করি জুলাই বিপ্লবেরর পর জাতি হিসেবে এটি আমাদের বড় একটি অর্জন। এছাড়াও একটি ক্রসফায়ারের ঘটনাও ঘটেনি, এটি সরকারের আন্তরিকতার কারণেই সম্ভব হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও এই সরকারের শাসনামলের পার্থক্য তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন ‘পার্থক্যের জায়গাটা আমরা যেটা বুঝাতে চাচ্ছি, সেটি হলো রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য নিজেদের যেভাবে সম্পৃক্ত করেছিল বিগত নৈরাজ্যবাদী শাসনামলে/ফ্যাসিস্টদের আমলে, জুলাই পরবর্তী সরকার মানবাধিকারের বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসব মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশ বাদী হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। যাতে করে মিথ্যা কাহিনীর মামলা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের না হয়।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এ সরকার আরেকটি কাজ করেছে, আমরা যখন দেখেছি এ ধরনের মিথ্যা মামলা ঠেকাতে আইনের পরিকাঠামোয় কোনো ম্যাকানিজম নেই, তখন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারার পরে ১৭৩(ক) ধারা সংযোজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সংযোজনের মাধ্যমে একটি জেলায় জেলার এসপিকে এবং মেট্রোপলিটান এলাকায় পুলিশ কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কেউ যদি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরর অভিযোগ আনেন, উনার সেই দরখাস্তের বক্তব্য গ্রহণ করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দিতে পারবেন। যাতে করে ওই নিরীহ মানুষ অবিচারের শিকার না হন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মামলায় এই সংযোযিত আইনের প্রয়োগ হয়েছে। অনেকগুলো মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে। এটি আমাদের মানবাধিকারের জাগায় একটি অন্যতম অগ্রগতি বলে আমরা মনে করি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের (ওএইচসিএইচআর) প্রধান হুমা খান বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিত যে পরিমাণ উন্নত হওয়ার কথা ছিল, সেটি এখনও সম্ভব হয়নি। আগের অনেকর কালচার এখনও রয়ে গেছে। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হলে পুরাতন কালচার থেকে সরে আসতে হবে সরকারকে।