অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অস্বাভাবিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। এই অস্থিরতা কমার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। একদিকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, অন্যদিকে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান রকেট হামলা। একই সাথে বিস্তৃত সংঘাতের মধ্যে ইরানও একের পর এক ইসরায়েলি ঔদ্ধত্য সহ্য করছে।
প্রথমবার ইরান যখন হামলা চালায়, তখন ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও ড্রোন দিয়ে জবাব দেয়। সংঘাত পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার মধ্যেই ইরানে আলোচনার টেবিলে থাকা একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধি ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা করে ইসরায়েল।
হানিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিশর, তুরস্ক এবং এমনকি চীনের সাথে আলোচনা করছিলেন এবং ঐক্য গড়ে তোলার জন্য (গাজা যুদ্ধ থামাতে) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৪ জন প্রতিনিধিকে একত্রিত করার চেষ্টা করছিলেন।
ইসরায়েল ইরানে হানিয়াহকে লক্ষ্য করে সরাসরি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে হামলা চালিয়েছে। ইরানের মাটিতে এই হামলা ছিল সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড সাধারণত যে কোনো রাষ্ট্রকে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করে তুলবে।
ইরান নিঃসন্দেহে এই হামলার কথা স্মরণ করবে এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এর জবাব দিতে দ্বিধা করবে না। তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা না নিতে পারলেও ইরান পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সঠিক সময়টিই বেছে নেবে।
ঐতিহাসিকভাবে, ইরান ইসরায়েলের সাথে সরাসরি সংঘর্ষ থেকে বিরত থেকেছে এবং প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে জড়িত থাকাটাই বেছে নিয়েছে। তবে এবার ইসরায়েল সরাসরি ইরানের মাটিতে টার্গেট করে এক রাজনৈতিক অতিথির ওপর আঘাত করেছে। এর ফলে ইরানকে কোনো না কোনোভাবে প্রতিশোধ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলের উপর সরাসরি সামরিক হামলা চালাবে, নাকি ভিন্নরূপে তা প্রকাশ করবে- তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই ঘটনা ওই অঞ্চলে পুরো ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দিতে পারে।
ইরানের প্রতিশোধের সঙ্গে সাইবার হামলা বা কৌশলগত কূটনৈতিক কৌশলও থাকতে পারে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের ইতিমধ্যে নাজুক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, যা অন্যান্য দেশ ও প্রধান বৈশ্বিক শক্তিকে আকর্ষণ করতে পারে।
বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে, মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ থেকে কেউ লাভবান হবে না। ইতিহাস দেখায়, এই ধরনের পদক্ষেপ কেবল ধ্বংসাত্মক পরিণতিই ডেকে আনে।
ইরাকে মার্কিন হস্তক্ষেপের ফলে এক মিলিয়ন লোকের প্রাণহানি ঘটে, লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এবং অগণিত আহত হয়। একইভাবে ইরাক এবং সাম্প্রতিককালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিনিরা বিজয়ী হতে পারেনি।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবে না থেকে আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং এই প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক ভারসাম্যকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা দেখার জন্য বিশ্ব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
Leave a Reply