অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। ইতোপূর্বে আরেকটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের কয়েক মাস পর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে দেশটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুসারে, মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে কেন্দ্রস্থলে ২৮ কিলোমিটার (১৭ মাইল) গভীরতায় রাতে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।
স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র কামাল খান জাদরান জানিয়েছেন, বলখ প্রদেশে চার জন প্রাণ হারিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রাদেশিক হাসপাতালও ১২০ জন আহত রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) মুখপাত্র মোহাম্মদুল্লাহ হামাদ বলেছেন, পার্শ্ববর্তী সামানগান প্রদেশে পাঁচ জন নিহত ও ১৪৩ জন আহত হয়েছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আহতদের বেশিরভাগই চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।’
এর আগে ভূমিকম্পে পাহাড়ি আফগানিস্তানে দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো, দুর্যোগ মোকাবেলায় বাধা সৃষ্টি করেছে— যার ফলে কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা, এমনকি দিনের পর দিন দূরবর্তী গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে পারেনি।
এএফপি’র সংবাদদাতা জানান, ভূমিকম্পের ফলে আফগানিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরীফের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রাস্তায় নেমে এসেছেন।
ভূমিকম্পটির প্রচণ্ডতার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাজারই-ই-শরীফের দক্ষিণে প্রায় ৪২০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী কাবুলের সংবাদদাতারাও বলেছেন, ভূমিকম্পের সময় তারা কাবুল থেকেই কম্পন অনুভব করেছেন।
এটি তালেবান সরকারের জন্য সর্বশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই সরকার ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনটি বড় মারাত্মক ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে।
পাশাপাশি, দেশটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করা বিদেশী সাহায্যও নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আগস্টে, দেশটির পূর্বে ৬.০ মাত্রার একটি অগভীর ভূমিকম্পে পাহাড়ি গ্রামগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি লোক মারা যায়।
২০২৩ সালে ইরান সীমান্তের কাছে পশ্চিম হেরাতে ও ২০২২ সালে পূর্ব নাঙ্গারহার প্রদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পে শত শত মানুষ মারা যায় এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।
জাতিসংঘ ও সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে আফগান জনগণের মধ্যে ক্ষুধা বাড়ছে।
খরা, ব্যাংকিং খাতের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতিবেশী ইরান ও পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ আফগান নাগরিকের প্রত্যাবাসনের ফলে বিচ্ছিন্ন এই দেশটি মানবিক সংকটে ভুগছে।
আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প ঘটে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর প্রাকৃতিক দুর্যোগটি বেশি হয়, যেখানে ইউরেশিয়ান ও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয়।
দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধে বিধ্বস্ত এই প্রধানত গ্রামীণ দেশটির অনেক বাড়িঘর নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি এবং এগুলোর কাঠামোও দুর্বল।
দুর্গম গ্রামগুলোতে বন্ধুর পথঘাট দিয়ে যেতে প্রায়শই ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমন কি দিনের পর দিন সময় লেগে যায়।
এই কারণে দুর্যোগ বা খারাপ আবহাওয়ার সময় প্রায়শই গ্রামগুলো সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।