অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : একটি মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এক গবেষণা প্রকাশ করে বলেছে যে আমেরিকার যুদ্ধংদেহী নীতির ফলে ২০০১ সাল থেকে পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
আমেরিকার “ব্রাউন” ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত “ওয়াটসন” থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্বারা পরিচালিত গবেষণা অনুসারে, ২০০১ সালের পর আমেরিকার যুদ্ধের ফলে পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুসারে, এদের মধ্যে অন্তত ৩৬ থেকে ৩৭ লাখ মানুষ যুদ্ধের প্রভাবে মারা গেছে যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়া, স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ধ্বংস, পরিবেশ দূষণ এবং যুদ্ধের অন্যান্য প্রভাব।
এই পরিসংখ্যানটি এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর যুদ্ধে হতাহতের পরিসংখ্যান সব সময় বিতর্কিত এবং সন্দেহজনক ছিল। ২০১৫ সালে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস নামে একটি আর্ন্তাজাতিক সংস্থা একটি প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে ইরাক, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে মার্কিন যুদ্ধের ফলে ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে।
যাইহোক যুদ্ধে পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সহজ নয়। এই মৃত্যুগুলোর বেশিরভাগই ক্ষুধা এবং খাদ্য নিরাপত্তার অভাবের কারণে ঘটেছে। এটি এমন একটি সমস্যা যা যুদ্ধের কয়েক মাস বা এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত প্রভাব থাকতে পারে।
ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “পরোক্ষ মৃত্যু ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। কারণ যুদ্ধ না হলে তাদের অনেককে হয়ত বাঁচানো যেতো।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চারণভূমি মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ার জনগণের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে এনেছে।
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর বিশ্বব্যাপী কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে অত্যন্ত আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেন এবং এর অংশ হিসেবে আফগানিস্তান ও ইরাকে আক্রমণ করেন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত এই বিশ্বযুদ্ধে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। ইরাকে আইএসআইএল-এর মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে যারা ইরাক এবং সিরিয়ায় ব্যাপক অপরাধযজ্ঞ চালায়। “ওয়াটসন” থিঙ্ক ট্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুসারে, ৯/১১ পরবর্তী যুদ্ধে ৩ লাখ ৮৭ হাজার বেসামরিক নাগরিক সহ ৯ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি মারা গেছে। আরও ৩৮ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত বা উদ্বাস্তু হয়েছে।
এছাড়া ২০২০ সালের মে মাসে আইএসআইএলের-এর বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট একটি বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে ২০১৪ সাল থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় এই কথিত জোটের বিমান হামলায় ১,৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। জোটের এই কর্মকাণ্ডে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ২০১৭ সালে আইএসআইএলের কাছ থেকে রাকা শহর মুক্ত করার সময় ১,৬০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল। পাশাপাশি মার্কিন বিমান ও কামানের হামলার কারণে শহরের ৯০ ভাগ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
যাইহোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথিত সন্ত্রাাসের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে কোন সুফল পায়নি এবং ২০২১ সালে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করে।
র্যান্ড ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক জেমস ডবিনস ২০১৩ সালে এক নিবন্ধে বলেছেন, যদিও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের নীতির অনেক সমালোচনা রয়েছে তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে আফগানিস্তানে আমেরিকার যুক্ত হওয়া শুরু থেকেই ভুল এবং ধ্বংসাত্মক ছিল। যদিও এটি এখনও ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। আমেরিকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথিত লড়াইয়ে হাজার হাজার মার্কিন সেনা হতাহত হওয়ার পাশাপাশি এসব লড়াই দেশের বাজেটের ওপর বিশাল খরচ চাপিয়ে দিয়েছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে এসব যুদ্ধে আমেরিকা ৭ ট্রিলিয়ন ডলার খুইয়েছে। ইতিহাসবিদ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক চার্লস স্ট্রোজিয়ার বলেছেন, “১১ সেপ্টেম্বরের হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গভীর অস্তিত্বের সংকট তৈরি করেছিল। যার ফলে ওয়াশিংটন একটি “আহত পশুর” মতো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধে জড়িয়ে বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে নিজের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে।”
Leave a Reply