অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরান যখন ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের ৪৪ তম বার্ষিকী উদযাপন করছে তখন সাবেক মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান এবং চরম ডানপন্থি ও যুদ্ধবাজ রাজনীতিবিদ জন বোল্টন দাবি করেছিলেন যে বিপ্লবের ৪০ তম বার্ষিকীর আগে সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী ইরানকে শাসন করবে।
জন বোল্টন যিনি জর্জ ডব্লিউ বুশ জুনিয়র শাসন আমলে জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি এবং পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি সেইসব মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন যারা ইরানের সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর সমাবেশে অংশ নিয়ে তেহরানের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাতে তাদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছিলেন। অথচ ২০১২ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় ছিল এই মোনাফেকিন গোষ্ঠী। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্যারিসে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিরুদ্ধে নাশকতা চালিয়ে আসা এই মোনাফেকিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বার্ষিক সভায় বোল্টন ইরানের বিরুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাগারম্বরপূর্ণ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন যে ট্রাম্প প্রশাসনে ইরান বিষয়ে নীতি সংশোধনের একটা ফলাফল আসা উচিত। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেছিলেন যে যে ইসলামী বিপ্লবের ৪০ তম বার্ষিকী ইরানিরা উদযাপন করতে সক্ষম হবে না। তিনি এও বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অনেকেই যা করার চেষ্টা করছি তা হল যে আয়াতুল্লাহ খোমেনির ১৯৭৯ সালের বিপ্লব তার ৪০ তম বার্ষিকী পর্যন্ত স্থায়ী হবে না।”
৪৪তম বিপ্লব বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় লাখ লাখ ইরানি অংশ গ্রহণ করে ইসলামি শাসন ব্যবস্থার প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন।
জন বোল্টনের এই অপূর্ণ ইচ্ছা আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী ইচ্ছা।গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকা এই আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আসছে যে তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করবে। কারণ গত ৪৪ বছর ধরে এই মহান শাসন ব্যবস্থা ওয়াশিংটনের আধিপত্যবাদী নীতি ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াশিংটন যখনই ইরানের ইসলামি ব্যবস্থাকে উৎখাত করার অপচেষ্টা চালিয়ে তখনই তারা চরম অপমান ও অপদস্ত হয়েছে।
ইসলামি ইরান পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধাম্ভিকতাপূর্ণ ও আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জসৃষ্টিকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি কেবল ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই ধ্বংস করেনি বরং পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যবাদী নীতির অংশীদারদের নীতি ও ক্রিয়াকলাপ বিশেষ করে ইহুদিবাদী শাসকদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করেছে। ইরান থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত প্রতিরোধাকামী অক্ষ তৈরি করা ইসলামি ইরানের শক্তিমত্তা এবং ইহুদিবাদী বিরোধীতার প্রতিক।
এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেছেন: ‘এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে গত ৪৩ বছরে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে। এটা তাদের অন্তরের অভিপ্রায়। বহুবার পারমাণবিক আলোচনায় আমেরিকান পক্ষকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আপনাদের আচরণ সৎ নয় এবং চলমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তা কাজ করবে না। বরং আপনারা সবসময় এই অঞ্চলে আপনাদের গোপন স্বার্থের কথাই ভাবেন এবং এই অঞ্চলের জাতিগুলির কথা ভাবেন না।’
এটা বলা যেতে পারে যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী দিক হল দেশটির পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নিত্য নতুন ও নজিরবিহীন প্রক্রিয়ার অনুসরণ করা যা দাম্ভিকতা বিরোধী এবং আধিপত্যের বিরুদ্ধের মোকাবিলার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। এখন ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকীতে ইরান বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এখন অকপটে স্বীকার করছেন যে ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে।
যাইহোক সর্বোচ্চ প্রতিরোধের নীতি অবলম্বন করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ওয়াশিংটনের সমস্ত চাপ ও তার বৈরি নীতির প্রচেষ্টাকে পরাজিত করেছে। ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকীতে দেশটি আগের চেয়ে আরও দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সুন্দর জীবন চালিয়ে যাচ্ছে।
Leave a Reply