অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। ইরান ও ইসরায়েলের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক হুমকি বিনিময় এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে আরও ঝুঁকিতে ফেলছে। সর্বশেষ হুমকি এসেছে ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারির কাছ থেকে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, “অপারেশন ট্রু প্রমিজ-থ্রি”-এর মাধ্যমে ইরান ইসরায়েলকে ধ্বংস করবে।
শনিবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ইরান গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে দুই দফায় ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল সেগুলো অপারেশন ট্রু প্রমিজ ও অপারেশন ট্রু প্রমিজ টু নামে পরিচিত।
মেজর জেনারেল জাব্বারি সতর্ক করে বলেছেন, “অপারেশন ট্রু প্রমিজ-থ্রি হবে সঠিক সময়ে; নির্ভুলতার সঙ্গে ও এমন মাত্রায় এটি পরিচালিত হবে, যা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে এবং তেল আবিব ও হাইফাকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে যথেষ্ট।”
আইআরজিসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে এটি তৃতীয় হুমকি। জব্বারির দিন কয়েক আগে আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি ফাদাভি ও আইআরজিসির এরোস্পেস বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেও ইসরায়েলকে ধ্বংসের হুমকি দেন।
এদিকে, এর জবাবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’র বলেছেন, “ইতিহাস থেকে যদি ইহুদিরা কিছু শিখে থাকে, তা হলো তোমার শত্রু যদি বলে তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে, তাহলে সেটা বিশ্বাস করো। আমরা প্রস্তুত।”
দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি এ হুমকি বিনিময় এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন আইআরজিসি তাদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান সম্প্রতি চীনের কাছ থেকে রকেটের ১ হাজার টন জ্বালানি বানাতে দরকারি রাসায়নিক পেয়েছে।
আইআরজিসি সম্প্রতি ‘দক্ষিণের কৌশলগত জলসীমায়’ হামলায় সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন একটি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি উন্মোচন করেছে।
মিডল ইস্ট কোয়ার্টারলিতে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআই-তে ৩০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কলিন উইনস্টনের নিবন্ধের উদ্বৃতি দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যদি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ হামলা করতে চায়, তাহলে এটাই সেরা সময়।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এই কমকর্তার মতে, হিজবুল্লাহ ও হামাস এই মুহূর্তে ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়। ইরানের ‘প্রতিরোধ অক্ষ শক্তির’ অবস্থাও নড়বড়ে। ইরান ও সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে।
উইনস্টন দাবি করেন, ইরান একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়াম উৎপাদনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তিনি যুক্তি দেন, ইরানের ‘পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন’ শনাক্ত করার জন্য গোয়েন্দা তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা এখন আর কার্যকর কৌশল নয়। এখন জেরুজালেম ও ওয়াশিংটনের ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।
উইনস্টনের নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সময়সীমাকে নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাও অনুমান করছে, ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি গত মাসে সতর্ক করে বলেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যেকোনো ইসরায়েলি বা মার্কিন হামলা এই অঞ্চলে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ডেকে আনবে।”
কাতার সফরের সময় আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস আরাঘচি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক আক্রমণ শুরু করা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ভুলগুলোর মধ্যে একটি হবে।”
গত মাসে একাধিক মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল চলতি বছরের মাঝামাঝি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় একটি আগাম হামলা চালাতে পারে।
Leave a Reply