অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : এক সময়ের মৃতপ্রায় দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা এখন কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। দিনের পর দিন পশুর নদীতে জাহাজশূন্য হয়ে পড়ে থাকতো বন্দরের মুরিং বয়া (জাহাজ নোঙ্গর করার বয়া)। এখন সেখানে সারি সারি জাহাজ। ভবিষ্যতে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় আরও বদলে যাচ্ছে এই বন্দরের দৃশ্যপট।
মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে মৃতপ্রায় এই বন্দর উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। পশুর চ্যানেল ড্রেজিং থেকে শুরু করে বন্দরে জাহাজ আগমন-নির্গমন নির্বিঘঘ্ন করার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই বন্দরের প্রতি আগ্রহ দ্রুত ফিরতে থাকে। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ লাখ টন। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২০ হাজার ৬৫১ টিইউচ। আর গাড়ি এসেছে ৩ হাজার ৩১৯টি। ধারাবাহিকভাবে প্রতি অর্থ বছরে কার্গো, কন্টেইনার এবং গাড়ি আমদানি বাড়তে বাড়তে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১১৩ দশমিক ৯২ লাখ টন কার্গো হ্যাল্ডলিং হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ হাজার ২৬৯ টিইউচ। আর গাড়ি এসেছে সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৪৮৪টি।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী এস এম মোস্তাক মিঠু বলেন, অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় এই বন্দর ব্যবহারে সর্বোচ্চ সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া বন্দরে আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি হওয়ায় পণ্য খালাসে তাদের অর্থ ও সময় অনেক কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তের ফলে দক্ষতা বৃদ্ধির এসব কার্যক্রম সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা। তিনি বলেন, ‘ইনার বারে (পশুর চ্যানেল থেকে জেটি পর্যন্ত) ড্রেজিং করে খননকাজের পর বন্দর জেটিতে এখন সাড়ে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারে। এতে করে বন্দরে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১০০টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হচ্ছে ২৪০ কোটি টাকার মত। একসঙ্গে ৩০টি জাহাজের বার্থিং দিতে সক্ষম হচ্ছে মোংলা বন্দর। এর মধ্যে বন্দরের নিজস্ব জেটিতে পাঁচটি, মুরিং বয়ায় তিনটি, নোঙ্গরে ২২টি এবং বেসরকারি কোম্পানির জেটিতে সাতটি জাহাজের বার্থিং একই সময়ে সম্ভব হচ্ছে। সব মিলিয়ে মোংলা বন্দর এখন সর্বপ্রকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আধুনিক এক সমুদ্র বন্দরের নাম’।
বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, পদ্মা সেতুর সৌভাগ্যে মোংলা বন্দর থেকে এখন গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের জন্য শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস) কোড চালু করা হয়েছে। এছাড়া অত্যাধুনিক হ্যান্ডলিং সরাঞ্জামের সুবাদে স্বল্পতম সময়ে পণ্য লোড-আনলোডিং (খালাস বোঝাই) সম্ভব হচ্ছে উল্লেখ করে মোংলা বন্দরকে বদলে দিতে সক্ষমতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কার্গো ও কন্টেইনার হ্যাল্ডলিং সক্ষমতা আরও বাড়াতে ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে বলেও জানান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা। তিনি বলেন, ‘নিরাপদ চ্যানেল দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজকে সুষ্ঠভাবে বন্দরে আনতে এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধারকাজের জন্য অত্যাধুনিক জলযান সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অধিক গভীরতা জাহাজ প্রবেশে ইনার বারে ২ কোটি ১৬ লাখ ৯ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
লা বন্দরকে এই অঞ্চলের ট্রানজিট হাব হিসেবে গড়ে তুলতে কন্টেইনার ইয়ার্ড, হ্যাল্ডলিং ইয়ার্ড ও ডেলিভারি ইয়ার্ড সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, উন্নত হিন্টারল্যান্ড যোগাযোগ ও অবকাঠামো সক্ষমতার সুযোগে পণ্য আমদানি-রফতানিতে মোংলা বন্দরের ওপর ব্যবসায়ীদের নির্ভরতা দ্রুত বাড়ছে। এছাড়া অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় এই বন্দরে বিদেশি জাহাজ বেশি ভিড়ছে। ভারতের পাশাপশি নেপাল ও ভুটান নিয়মিত এই বন্দর ব্যবহার করলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
বর্ধিত এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ কার্গো ও কন্টেইনার হ্যাল্ডলিংয়ের যে প্রাক্কলন, তা বাস্তবায়নে মোংলা বন্দর ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply