অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম
অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কুমিল্লার হোমনায় মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম হাবিবের বিরুদ্ধে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে এক শিক্ষার্থীর দুই নিতম্ব ও পায়ের তলা পুড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সহযোগী শিক্ষক আতিকুলকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে এগারোটার দিকে উপজেলার নয়াকান্দি মমতাজিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে ঘটনা প্রকাশ পায়।
অভিযুক্ত মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম (২৮) উপজেলার নয়াকন্দি গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে। এবং গ্রেপ্তার শিক্ষক আতিকুল ইসলাম (২৮) মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার শ্রীকাইল গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে।
হেফজ বিভাগের ছাত্র আব্দুল কাইয়ুম উপজেলার চান্দেরচর গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আব্দুল কাদির ও হাফেজা বেগমের সন্তান। এ ঘটনায় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির এক বিশেষ সভায় মঙ্গলবার মুহতামিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা, হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন ওই মাদ্রাসা পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনায় সোমবার রাতে শিক্ষার্থীর মা হাফেজা বেগম মূল অভিযুক্ত মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম হাবিব, সহযোগী শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মূল অভিযুক্ত মুহতামিম ও আসামি তিন শিক্ষার্থী পালিয়ে গেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, দেখে মনে হয়েছে, দশ/বার দিন আগেই পুড়েছে। পোড়া দুই নিতম্বেই গভীর ঘাঁ হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জানা গেছে, সহপাঠীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করার সময় পরনের লুঙ্গি খুলে যায় আবদুল কাইয়ুমের। এ কথাটিই তারা মুহতামিমকে জানালে তিনি রাতে শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ আরও তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় শিশু আবদুল কাইয়ুমকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করেন। এতে তার দুই নিতম্ব এবং পায়ের তলা ঝলসে যায়। গত দশ দিন শিশু আবদুল কাইয়ুমকে একটি বদ্ধরুমে আটকে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাখার কারণে কেউ এতদিন মুখ খোলেনি। এখনও ভয়ে কেউ কিছু বলছে না। পোড়া ক্ষতের কারণে ঠিক মতো সে চলাফেরাও করতে পারছিল না। সোমবার বিকালে কাইয়ুমের মা হাফেজা বেগম ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে প্রথমে তাকে সাক্ষাৎ করতে দেয়নি। পরে অনেক চেষ্টার পরে তাকে দেখতে দেওয়া হয়।
নির্যাতিত শিক্ষার্থীর মা হাফেজা বেগম বলেন, সোমবার সকালে আমার ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে সে আমাকে দেখে কাঁদতে থাকে এবং বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়। ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝে তাকে বাড়ি নিয়া আসি। বাড়িতে গিয়ে আমাকে সে তাহার জখমের জায়গা দেখিয়ে পুরো ঘটনা বলে। ছেলে ইস্ত্রির ছ্যাঁকায় গুরুতর জখম হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তারা আমার ছেলের প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করেছে। বিষয়টি আমার প্রবাসী স্বামী এবং এলাকার ব্যক্তিদের জানিয়ে হোমনা থানায় অভিযোগ করেছি।
ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। শিশুটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ইস্ত্রি এবং মাদ্রাসার সিসি টিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো থানায় জমা আছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীকে জানানো হয়েছে। মাদ্রাসা কমিটিকেও বলেছি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে। মামলা হয়েছে। আমরা নজর রাখছি।
হোমনা থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, শিশু আবদুল কাইয়ুমকে ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে পোড়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত।
Leave a Reply